Decision Maker

দেশের শীর্ষ ১০ আইপিও

গত ১০ বছরে ভালো-মন্দ মিলিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে শতাধিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাজারে আসা কোম্পানিগুলো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোর কোনোটি স্থির মূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে, আবার কোনোটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে শেয়ার ছেড়েছে।

শীর্ষ ১০ আইপিও
গত ১০ বছরে যতগুলো আইপিও বাজারে এসেছে তার মধ্যে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বড় ১০ আইপিওর শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে মবিল যমুনা লুব্রিকেন্টস (এমজেএল), একমি ল্যাবরেটরিজ, এম আই (ক্রাউন) সিমেন্ট, ওরিয়ন ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, অ্যাপোলো ইস্পাত, বসুন্ধরা পেপার, ইউনিক হোটেল (ওয়েস্টিন) ও শাশা ডেনিমস। এ ১০টি কোম্পানি মিলে শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন ব্যবসা চালু, ব্যাংকঋণ শোধ, কারখানা তৈরি, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ভবন নির্মাণসহ ব্যবসায়িক নানা প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রি করে এ অর্থ সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো। এবার জেনে নেওয়া যাক কোন কোম্পানি কত টাকা তুলেছে আইপিওতে।

গ্রামীণফোন

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ১০ বছরে ভালো-মন্দ মিলিয়ে আইপিওতে যত কোম্পানি এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আইপিও ছিল গ্রামীণফোনের। টেলিযোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বড় এ কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ খাতের একমাত্র কোম্পানি। ২০০৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। আর চূড়ান্তভাবে এটি বাজারে তালিকাভুক্ত হয় বর্তমান সরকারের এবারের টানা শাসনামলের প্রথম মেয়াদে।

গ্রামীণফোন আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪৮৬ কোটি সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি সংগ্রহ করেছে। এখন পর্যন্ত এটিই দেশের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় আইপিও। আইপিওতে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ৬০ টাকা অধিমূল্য বা প্রিমিয়ামসহ মোট ৭০ টাকায়। তাতে আইপিওর মাধ্যমে গ্রামীণফোনের সংগ্রহ করা ৪৮৬ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৪১৭ কোটি টাকা প্রিমিয়াম বাবদ সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত আইপিও হিসেবে স্বীকৃত গ্রামীণফোন।

এমজেএল

এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১১ সালে। গ্রামীণফোনের পর টাকার অঙ্কে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইপিও ছিল এ কোম্পানির। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধস বা কেলেঙ্কারির পর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানিটি বাজারে আসে। ধসের পর বাজারে আসায় কোম্পানিটিকে শেয়ারের দামে কিছুটা ছাড় দিতে হয়। শুরুতে এটির শেয়ারের আইপিও মূল্য ১৫২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও পরে তা কমিয়ে ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে ১০ টাকা ছিল অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু আর বাকি ১০৫ টাকা প্রিমিয়াম। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে সংগ্রহ করে ৪৬০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৪২০ কোটি টাকাই ছিল প্রিমিয়াম।

একমি

টাকার অঙ্কে তৃতীয় বৃহৎ আইপিও একমি ল্যাবরেটরিজের। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এ পদ্ধতিতে শেয়ারের দাম ঠিক নির্ধারণের মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে তুলেছে মোট ৪০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এমআই সিমেন্ট

টাকার অঙ্কে দেশের শেয়ারবাজারে চতুর্থ বৃহৎ আইপিও এমআই সিমেন্টের। ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটির শেয়ারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হয় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে এটির শেয়ারের আইপিও মূল্য দাঁড়ায় ১১১ টাকা ৬০ পয়সায়। যার মধ্যে ১০১ টাকা ৬০ পয়সা প্রিমিয়াম। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মোট ৩৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে।

ওরিয়ন ফার্মা

কোম্পানিটি স্থির মূল্য পদ্ধতিতে দর নির্ধারণের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৩ সালে। আইপিওতে কোম্পানিটি ৪ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ২৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় ৬০ টাকা দামে, যার মধ্যে ৫০ টাকা প্রিমিয়াম।

এ ছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের দাম নির্ধারণের পর আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ২৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটি আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করেছে ৭২ টাকায়। টাকার অঙ্কে সপ্তম বৃহৎ আইপিও অ্যাপোলো ইস্পাতের। কোম্পানিটি আইপিওতে ১০ কোটি শেয়ার ছেড়ে ২২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১২ টাকা অধিমূল্য যোগ করে প্রতিটি শেয়ারের আইপিও মূল্য ছিল ২২ টাকা। বর্তমানে অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ারের বাজারমূল্য ৪ টাকার ঘরে। গত ১০ বছরের শীর্ষ ১০ আইপিওর মধ্যে অ্যাপোলো ইস্পাতই সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

টাকার অঙ্কে বৃহৎ আইপিওর দিক থেকে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিলস। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটির শেয়ারের আইপিও মূল্য নির্ধারিত হয় ৭২ টাকা। যার মধ্যে ৬২ টাকায় প্রিমিয়াম। ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে আসা এ কোম্পানিটি বাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে নবম অবস্থানে আছে ইউনিক হোটেল, যা ওয়েস্টিন হোটেল নামে পরিচিত। এ কোম্পানিটি আইপিওতে ২ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে ১৯৫ কোটি টাকা তুলেছে। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ৭৫ টাকায়, যার মধ্যে ৬৫ টাকায় প্রিমিয়াম।

দশম বৃহৎ আইপিওর তালিকায় রয়েছে শাশা ডেনিমস। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ১৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ৩৫ টাকায়, যার মধ্যে ২৫ টাকা প্রিমিয়াম।

Exit mobile version