ক্রমেই নাজুক হচ্ছে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। দিন যতই যাচ্ছে পতনের আকারও তত ভয়াবহ হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে হতাশা ও ক্ষোভ। পূর্বে এমন অস্বাভাবিক দরপতনে উপায়ান্তর না পেয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু নিয়ন্ত্রকদের জিডির কারণে সেই প্রতিবাদটুকুর সক্ষমতা হারিয়েছেন তারা। ফলশ্রুতিতে চোখের সামনে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারানোর কষ্টে নিরবেই ঝড়ছে তাদের অশ্রু। বিভিন্ন প্রনোদনায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় বুক বেঁধে থাকা বিনিয়োগকবারীদের এখন পথে বসায় পালা। যদিও অনেক বিনিয়োগকারী বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে সম্প্রতিক পতনে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরই গত দু-তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাশাপাশি কিছু কিছু শেয়ারের দর কমেছে আশংঙ্কাজনক হারে। যা বাড়াচ্ছে সূচক পতনের গতি। এরই ধারবাহিকতায় আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার ঠিক হয়ে যাবে সংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত আমাদের এই আশার বাণী শোনাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো প্রতিদিনই আমাদের লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে। ২০১০ সালেও তারা আমাদের এমন আশার বাণী শুনিয়েছেন, কিন্তু কিছুই কোনো কাজে আসেনি। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আমাদের অবস্থা করুণ হবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যাংক খাতের সংকট এখন দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারে। ওই খাতের সমস্যা এখন পুঁজিবাজারে ছড়াচ্ছে। যদিও পুঁজিবাজারে গত ৮-৯ বছরে অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু আলোর মুখ দেখতে পায়নি বাজার। আর মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজারের মধ্যে ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু দশ বছর আগে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাজারে কী ধরনের প্রভাব (ইমপ্যাক্ট) পড়বে সেটা বিশ্লেষণ করার জন্য একটা ডিপার্টমেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। বাজারে কেমন প্রভাব পড়তে পারে তারা সেটা বিশ্লেষণ করার পর সার্কুলার জারি হতো। কিন্তু এখন বাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তার কোনও বিশ্লেষণ না করেই সার্কুলার জারি করা হয়। এখন ইমপ্যাক্ট নিয়ে কোনও স্টাডি করা হয় না। বছরের পর বছর চলছে কেবল সার্কুলার দিয়ে। একটা সমস্যা হলে, তখনই সার্কুলার জারি করে দেয়া কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। এ কারণে পুঁজিবাজারে কোনও স্থিতিশীলতা আসছে না বলেও মনে করছেন তারা।
তবে কেউ কেউ বলছেন, তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি ৫টি ব্যাংকের কাছে এ টাকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকগুলো এ টাকা দিলে তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। কেন এই পতন হচ্ছে তা বলা মুশকিল। তবে এ কথা ঠিক যে, বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। তারা অন্যের কথা ভয় পেয়ে হাতে থাকা শেয়ার কম দরে ছেড়ে দিচ্ছেন, যে কারণে পতন আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭৬১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৯৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৮৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ২৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৫২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৮১০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১১১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৭০৪ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২৯ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৮৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির, কমেছে ১৮১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।