বোনাস লভ্যাংশ ও রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপ প্রস্তাবের কারণে বাজেট ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে একধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাজারে দেখা দেয় একধরনের মন্দাভাব। তবে গতকাল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার ইতিবাচক সমাধান হবে বলে জানান। পাশাপাশি বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুইঁয়াও। নিয়ন্ত্রকদের এমন আশ্বাসে আজ পুঁজিবাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু রিজার্ভের ওপর এবং বোনাস শেয়ারের ওপর ট্যাক্স আরোপের যে প্রস্তাব কর হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপের কারণে কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে সমস্যা হবে। আর ঢালাওভাবে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ট্যাক্স আরোপের কারণে ভালো কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হবে। দুর্বল কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ ঠেকানোর জন্য কিছুদিন আগে বিএসইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটাই যথেষ্ট ছিল বলেও মনে করছেন তারা।
তারা আরও বলছেন, রিজার্ভ ও বোনাস লভ্যাংশের ওপর ট্যাক্স বসানো বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে নেননি। ফলে বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য দেয়া প্রণোদনাগুলো বাস্তবে উল্টো হয়ে গেছে। তবে বিএসইসি চেয়ারম্যান এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেছেন। তাছাড়া বিষয়টা সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ করছে। তাই বাজেটে রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স প্রস্তাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে কিছুটা মিশ্র প্রবণতা থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট ক্রয় চাপে টানা বাড়তে থাকে সূচক। এরই ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘোষণার পর টানা ২দিনের পতনের পর আজ উত্থানে ফিরেছে সূচক। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫৪০০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১২৩২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮৯৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৬টির, কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৫২৮ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৫৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫৩৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২২৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮৮৯ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩৫ কোটি ২৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০ হাজার ৩৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৯টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৮টির, কমেছে ৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৪২ লাখ ২ হাজার টাকা।