Decision Maker

পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে টাকা ঢালছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ৮৫৬ কোটি টাকা যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এই তহবিল দেয়া হচ্ছে। বিপুল অংকের এই অর্থ পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে অঅনতে সহায়তা  করবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বৃহস্পতিবার সকালে এই ৮৫৬ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে যোগানের বিষয়ে অনুমতি চেয়ে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে একটি চিঠি লেখেন।

অর্থমন্ত্রণালয় জরুরিভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবে সায় দিয়ে বিকেলেই সম্মতিপত্র পাঠায়।

অর্থসচিবের কাছে পাঠানো গভর্নরের চিঠিতে বলা হয়েছিল, পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়েগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ২০১২ সালের ৫ মার্চ সরকার ঘোণিত প্রণোদনা স্ক্রিমের আওতায় ৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছিল। যার মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর‌্যন্ত।

পরে এই তহবিলের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি এবং আইসিবর সমন্বয়ে গঠিত ‘তদারকি কমিটি’র তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরের মধ্যে তহবিল বিতরণের শর্তানুসারে তিন কিস্তিতে (প্রতি কিস্তি ৩০০ টাকা) তহবিলের ৯০০ কোটি টাকা আইসিবির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।

বর্তমানে ঐ তহবিল থেকে বিতরণ করা ঋণের সুদ-আসল হিসেবে অঅদায় করা ৮৫৬ কোটি আইসিবি কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট হিসাবে জমা করা হয়েছে।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে লেনরদেনে নিম্নগতির ধারা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ফেরত পাওয়া এই অর্থ আবর্তনশীল ভিত্তিতে পুন:ব্যবহারের অবকাশ ও প্রয়োজন রয়েছে’ উল্লেখ করে গভর্নর তহবিলের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০২২সালের ৩১ ডিসেম্বর করার সুপারি করেন।

পুঁজিবাজারে অব্যাহত দর পতনের প্রতিবাদে ঢাকার মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে গত সপ্তাহে বিক্ষোভ করেছিল বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

একইসঙ্গে এই তহবিলের হতে আইসিবির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের সুবিধাভোগী ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ছাড়াও বিস্তৃততর পরিসরে ( মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ ইত্যাদি মূলধন বাজারের অন্যান্য মর্ধবর্তী পক্ষগুলোসহ) তারল্য যোগানের সম্ভাব্যতা নির্ধারণের জন্য বিএসইসি, আইসিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যমান তদারকি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেন ফজলে কবির।

গভর্নরের এ সব প্রস্তাবের সবগুলোতে সায় দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান একটি সম্মতিপত্র পাঠিয়েছেন।

তাতে বলা হয়েছে,  পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়েগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রণোদনা স্ক্রিমের আওতায় আইসিবির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের সুদ-আসল হিসেবে আদায় করা অর্থ পুনঃব্যহারের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করা হল।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিপুল অংকের এই টাকা বাজারে আসলে তারল্য সংকট যেটা আছে সেটা অনেকটা কেটে যাবে। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।”

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, আস্থার সঙ্কটের কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ে ‘ইতিবাচক’ বক্তব্য দেওয়ায় সেই আস্থা ফিরে এসেছে। যে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন; তারা আবার বাজারমুখি হয়েছেন।

এই ৮৫৬ কোটি টাকা বাজারে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।

এদিকে  জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুঁজিবাজার নিয়ে ‘ইতিবাচত’  বক্তব্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসায় বাজারে তেজিভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১  বেড়েছে। আপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৪৮ পয়েন্ট। শতকরা হিসাবে যা ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে দুই বাজারে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৪৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। মে দিবসে সরকারি ছুটির কারণে বুধবার লেনদেন বন্ধ ছিল। আগের দিন মঙ্গলবার ডিএসইতে ৪১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। লেনদেনের এই অংক সোমবারের চেয়ে লেনদেন ১১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেশি।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে তাদের শঙ্কিত না হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে সব ধরনের পদক্ষেপ সরকার বাস্তবায়ন করছে।

পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তা নিয়ে কথা বলেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, আমি বলব, খুব বেশি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা কীভাবে ঠিক করা যায়, আমি এই পার্লামেন্টে বসেই কয়েকদিন আগে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত সভা করেছি।

পুঁজিবাজারে কারসাজি ঠেকাতেও সজাগ থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কেউ যদি কোনোরকম গেইম খেলতে চায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।

সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। Source: Dailystockbangladesh

Exit mobile version