Decision Maker

শীর্ষ ব্রোকারদের বাজার পতনের কারণ জানাতে বলেছে কমিশন

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ ব্রোকারদের সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার পতনের কারণ জানাতে বলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাজার পতনের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বানে গতকাল শীর্ষ ব্রোকাররা কমিশনে গেলে তাদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রাখতে শীর্ষ ব্রোকারদের ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে বৈঠক করেন তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা। বৈঠকে ব্রোকারদের কাছ থেকে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারের দরপতনের বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ জানতে চাওয়া হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্রোকারদের এ বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজের অথরাইজড প্রতিনিধিদের নিয়ন-নীতি অনুসরণ করে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া শীর্ষ ব্রোকারদের বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ছয় মাস ধরে বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে শীর্ষ ব্রোকারদের ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে। আমরা কমিটিকে জানিয়েছি সাম্প্রতিক সময়ের দরপতনে ব্রোকাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজার স্থিতিশীলতায় আমরাও ভূমিকা রাখতে চাই। কিন্তু অনেক সময় পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে ভূমিকা রাখা সম্ভব হয় না।

বিএসইসির তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বণিক বার্তাকে বলেন, বাজারের মোট লেনদেনের অর্ধেকই হয় শীর্ষ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে তাদের মতামত নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা তাদের ডেকেছিলাম। এ বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত বাজার পতনের কারণ সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণগুলো আমাদের কাছে পাঠাতে বলেছি। তাছাড়া আজ শীর্ষস্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করে এ বিষয়ে তাদের মতামত চাওয়া হবে। এমনকি আমরা পুঁজিবাজার-বিষয়ক গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকেও এ বিষয়ে মতামত নেব। পাশপাশি আমরা গত ছয় মাসে শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের কারণগুলো উদ্ঘাটনে কাজ করব।

ছয় মাসের বাজার পরিস্থিতি: এ বছরের শুরুটা ছিল দেশের পুঁজিবাজারের জন্য বেশ আশাব্যঞ্জক। জাতীয় নির্বাচনের পর বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে প্রাণ ফিরে আসে বাজারে। জানুয়ারিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৪৬৫ পয়েন্ট থেকে বেড়ে একসময় ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে উঠে যায়। তবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই ছন্দপতন ঘটে বাজারে। এর পর থেকেই নিম্নমুখিতায় পতিত হয় বাজার। যদিও মাঝেমধ্যে সূচকে কিছুটা উত্থান লক্ষ করা গেছে। তবে সেটি দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। এ রকম পরিস্থিতিতে গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা বৈঠক শেষে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মার্কেট-সংক্রান্ত বেশকিছু সংস্কারের ঘোষণা দেয় কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ মে বিএসইসির ৬৮৮তম কমিশন সভায় পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর বেশকিছু সংশোধনীর খসড়া জনমত যাচাইয়ের জন্য অনুমোদন করা হয়। আর সর্বশেষ এ মাসের ১৬ তারিখে ৬৯৩তম কমিশন সভায় এসব সংশোধনী চূড়ান্ত করে বিএসইসি। কিন্তু এসব সংস্কার সত্ত্বেও পুঁজিবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। থেমে থেমে দরপতন চলছেই। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৯৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ও ব্লুচিপ সূচক ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় যথাক্রমে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও ১ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। ডিএসইর পাশাপাশি সিএসইতে সূচকের পতন হয়েছে। সূচক কমলেও গতকাল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে আগের দিনের তুলনায় দৈনিক লেনদেন বেড়েছে।

কপারটেককে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্তির অনুমোদন: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার প্রক্রিয়ায় থাকা কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ডিএসইর পর্ষদ। গতকাল অনুষ্ঠিত এক্সচেঞ্জটির পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, লিস্টিং রেগুলেশনের ৫(৩) ধারা অনুযায়ী আইপিও সাবস্ক্রিপশন শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কপারটেকের ক্ষেত্রে এ সময়রসীমা আরো আগেই শেষ হয়ে গেছে। বিদ্যমান আইন অনুসারে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির সুযোগ নেই। তাই এ সময়সীমা বাড়ানোর শর্তে ডিএসইর পর্ষদ কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিএসইর পর্ষদে এ সিদ্ধান্ত অনুসারে বিএসইসির কাছে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য চিঠি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় কপারটেকের তালিকাভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যস্ত করা হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনানুসারে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু আইনানুসারে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ না থাকায় এ বিষয়টি পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এক্সচেঞ্জটির পর্ষদ কপারটেককে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়।

Exit mobile version