Decision Maker

সামান্য মুনাফায় সেলের প্রবণতা: বিনিয়োগে আগ্রহী হতে হবে সম্পদশালীদের

কয়েক দিনের ইতিবাচক প্রবণতার পর চালাক চতুর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলছেন। পাশাপাশি বাজারে কিছু বিনিয়োগকারী আছে যারা ডে ট্রেডিং করতে চায়। তারা একটু প্রফিট হলেই শেয়ার বিক্রি করে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসে অর্থাৎ সামান্য মুনাফা পেয়েই ছেড়ে দিয়েছেন এবং দর কমলে আবার বিনিয়োগ করছেন। তবে বর্তমান বাজার যে অবস্থায় আছে তার থেকে সামনে যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু অনেক সময় বাজার পেছনে যাওয়ার বড় কারণ হয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরণের অভাব। পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ক্যপিটালেও কিছুটা ঘাটতি আছে। ফলে তারা স্বল্প সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন। আর কিছু প্রফিট হলেই তা সংগ্রহ করতে চান। কাজেই এমন মনোভাব থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বেরিয়ে আসা দরকার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিনিয়োগকারী এক সেক্টরের শেয়ার ছেড়ে অন্য সেক্টরে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন তারা। মূলত নতুন করে শেয়ার ক্রয় করার জন্যই মুনাফায় থাকা শেয়ার সেল করেছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ফলশ্রুতিতে আজ বাজারে কিছুটা কারেকশন হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে। এর পাশাপাশি জিডিপির আকারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব তথ্য দিয়ে অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিমাপ করা হয়। কিন্তু এসব দিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারকে মাপা চলে না। আর এসব পরিসংখ্যান ও গড় তথ্য সত্য হলেও বাজারের ওপর তার প্রভাব নেই। কেন নেই এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। এছাড়া আমাদের অর্থনীতিতে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অবদান বেশি। অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কারণ পুঁজিবাজার একটি প্রাতিষ্ঠানিক বাজার। পুঁজিবাজার সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। পুঁজিবাজার নিরাপদ ও লাভজনক এ ধারণা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানি বলেই মনে করেন। সেখানে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। এখানে বেশকিছু খারাপ কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী নয়। এদের আগ্রহী করার জন্য দৃশ্যমান উদ্যোগও নজরে পড়ে না। সব মিলিয়ে বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এ বাজার টেকসই ও আস্থাশীলে পরিণত হতে আরও অনেক সময় লাগবে। দেশের সম্পদশালীদের পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫২২৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২০৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮৪১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ২১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫২৩৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১২০৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৮৫০ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৭৮ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৬৯৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির, কমেছে ১৫৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের বাজারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর আচরণ হলো দ্রুত মুনাফা অর্জন করা। পাশাপাশি গুজবনির্ভর লেনদেন করে ও তথ্য-উপাত্ত ছাড়া বিনিয়োগে অতিউৎসাহী হওয়ায় বাজারে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সামগ্রিক বাজার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা ও মৌলভিত্তির কোম্পানি বিশ্লেষণের সক্ষমতা অর্জনে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য একাডেমিক পর্যায়েও বিনিয়োগ শিক্ষা চালু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিএসইসিরও কিছু কিছু বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত। যেমন একটি কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা। আইপিওতে আসার পরপর বোনাস লভ্যাংশ দেয়া ও রাইটের মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলনের সুযোগোর ব্যাপারে কঠোর হওয়া। অন্যথায় বাজারে খারাপ শেয়ারের প্রবাহ বাড়তেই থাকবে। আর এতে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই। তাই পুঁজিবাজার সংস্কারে এর গভীরতা আরও বাড়াতে হবে বলেও ধারনা করেছেন ওই বিশ্লেষকরা।

Exit mobile version