পুঁজিবাজারে অস্থিরতা যেন কিছুতেই কাটছে না। মূলত দীর্ঘ মন্দায় পুঁজিবাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। পরে সেখান থেকে বাজেটে ভালো প্রনোদনার প্রত্যাশায় একটা জায়গায় ঘোরাফেরা করছিল সূচক। বিনিয়োগকারীরা ভাবেছিলেন নীতিগত একটি পরিবর্তন আসবে। তবে বাজেটে প্রনোদনার নামে যা দেয়া হয়েছে তাতে দৃশ্যমান ইতিবাচক কোনো নীতিগত পরিবর্তন আসেনি। এর মধ্যে রিজার্ভ কর নিয়ে একটা ধূম্রজাল তৈরি হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। কাজেই বিনিয়োগকারীদের আস্থার যে ফাটল ধরেছে সেটা কাটাতে দ্রুত দৃশ্যমান নীতিগত পরিবর্তন দরকার। যা বাজারে তারল্য বাড়াবে। এছাড়া চাহিদার কারণে বাজার বাড়তে থাকলে আবারও আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজার খারাপ হওয়ার পেছনে বিনিয়োগকারীদের ডে ট্রেডিংও অনেকটা দায়ি। তারা একটু প্রফিট হলেই শেয়ার বিক্রি করে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসে। যদিও তলানিতে থাকা এ বাজার সামনে যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু তারা সেটা না ভেবে নিজের স্বার্থটাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। বিনিয়োগকারীদের এমন ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত মাঝে মাঝে বাজার পেছনে যাওয়ার বড় কারণ হয়। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরণের অভাবে এমনটি ঘটে। কাজেই এমন মনোভাব থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বেরিয়ে আসা দরকার। কেননা নানাবিধ ইতিবাচক খবর থাকার পরও অনেক সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উল্টো আচরণে পুঁজিবাজারের অগ্রগতি ব্যহত হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের অর্থনীতি তথা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুঁজিবাজার কয়েকগুণ নিচে পড়ে আছে। আর এ তলানিতে থাকা বাজার নিয়েই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত। এখন বেশীরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম কোম্পানির আয়ের তুলনায় এমনকি গত কয়েক বছরের সর্বনিম্ন দরে নেমে গেছে। তাই এসব কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনেক কোম্পানি সন্তোষজনক লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। তাই ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে লোকসানের আশঙ্কা নেই। পাশাপাশি সরকারও পুঁজিবাজারের সব সমস্যা ধরে ধরে সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাজেই এ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এই মুহূর্তে কম দরে থাকা শেয়ারে অল্প অল্প করে সংগ্রহ করছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কাজেই আগামীতে বাজার ভালো হতে বাধ্য।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের সামান্য উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই সূচকে মিশ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে সূচক কছুটা বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫৩৮০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.৭৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১২৩০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮৯৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩১টির, কমেছে ১৬১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৭টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৪৫৩ কোটি ৩৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫৩৭৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২৩০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮৯৩ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৭৫ কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৯৮৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬২টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৭টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৯৬ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাজারের সূচককে প্রধান হিসেবে বিবেচনা না করে কোম্পানির পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ ভালো কোম্পানিও অনেক সময় অতি মূল্যায়িত হয়ে যেতে পারে যদি কোম্পানির আয়ের তুলনায় শেয়ারের দাম বেশি হয়ে যায়। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লোকসানের আশঙ্কা কম থাকে। তবে বর্তমানে কিছু ‘জেড’ ক্যাটাগরির মন্দ কোম্পানি রয়েছে। এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। অন্যথায় লোকসানের পড়তে হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন ওই বিশ্লেষকরা।