পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) অবসায়ন সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত ১১ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের নেওয়ার পর দুইমাস অতিক্রান্ত হলেও পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়নি ডিএসই। বরং আগামীকাল থেকে আরো ১৫ দিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন সাসপেন্ড রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই যা আগামীকাল ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এ কোম্পানির শেয়ার প্রতি ৩ টাকায় সর্বশেষ লেনদেন হয়। কোম্পানিটির অবসায়নের সিদ্ধান্ত আসার পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বের হওয়া শুরু করেন। কিন্তু লেনদেন বন্ধ করে রাখাতে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে বের হতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, সরকারের অনুমতিক্রমে এবং হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে পিপলস লিজিংকে অবসায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো আমানতের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হবে, যাতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

২০১৫ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে পিপলস লিজিংয়ের ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা উঠে আসে। কোম্পানিটির উদ্যেক্তারা স্ব-নামে বেনামে ঋণ নিয়ে এটিকে দুর্বল করে ফেলে। এটি বাংলাদেশে ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এলেও পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তীতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপরেও অবস্থার উন্নতি না হয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এ অবসস্থায় প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন করার বিষয়ে গত ২১ মে অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৬ জুন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে পিপলস লিজিংকে অবসায়ন করা হচ্ছে।’

পিপলস লিজিংয়ে আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমানতের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ফলে আমানতের তুলনয় সম্পদের পরিমাণ বেশি।’

অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে যে সব প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করে আদালত অবসায়ক নিয়োগ করার পর ফাংশনাল অডিট হবে, সেখানে পাওনার তুলনায় সম্পদ বেশি হয় তাহলে পুরো টাকা দিতে কোনো সমস্যা নেই। আর আমানতের তুলনায় সম্পদ কম হলে যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া আছে তা অনুসরণ করে দেওয়া হবে।’

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন লাভ করে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের সংখ্যা ৬৮ শতাংশ, উদ্যোক্তাদের শেয়ার ২৩ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৯ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটিতে মোট আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাকি ৭০০ কোটি টাকা রয়েছে ৬ হাজার সাধারণ গ্রাহকদের আমানত। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ।