বর্তমানে পুঁজিবাজারের অবস্থা বেদনা ও হতাশার। গত দেড় বছরে দৈনিক টার্নওভার ৩০০ কোটিতে নেমে এসেছে। এছাড়া সূচক, মৌল ভিত্তি, স্বল্প মূলধনিসহ মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দর ব্যাপকহারে কমেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনটি কারণে বাজারে এ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রথমত, তারল্য সংকট অর্থাৎ সরকারের খরচ যে হারে বেড়েছে, সে হারে আয় বাড়েনি। ফলে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন বছরে বেসরকারি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে, কিন্তু সে বিনিয়োগের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয়ত, গত কয়েক বছরে আইপিও’র মাধ্যমে যে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়েছে, তার প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে করা হয়নি। কারণ এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার আগে ব্যাপক উৎপাদন, ভালো ইপিএসসহ আরও অনেক বিষয় ইতিবাচক দেখানো হয়েছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেগুলো হ্রাস পেয়েছে। তাদের সততা ও স্বচ্ছতা ভালোভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। তৃতীয়ত, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা বোর্ডে থাকেন, তাদের যোগসাজশে ব্যাপক ঋণ দেওয়া হয়েছে। পরে এসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাজারে মূলধনের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এ দুটি খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতীতে এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেও গত দুই বছরে অজ্ঞাত কারণে সে সক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। যা বিনিয়োগকারীদের শঙ্কায় ফেলেছে। আর বিনিয়োগকারীধরে শঙ্কার কারণেই পুঁজিবাজার উন্নত হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি দুটি বিষয়ের ওপর মূল্যায়ন করা হয়। একটি হচ্ছে সূচক কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আরেকটি হচ্ছে বাজার মূলধন কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও টার্নওভার কতটা বাড়ছে। কিন্তু সূচক, বাজার মূলধন এবং টার্নওভার কোনোটারই তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। বরং সূচক ও টার্নওভার কমে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার পরিবর্তন আনতে হলে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, বাজারে ভালোমানের ইকুইটি আনতে হবে। তাদের বিভিন্নভাবে বাজারে আসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে এবং সক্রিয় থাকতে হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ব্যাংক খাত। এ খাতের সমস্যা সমাধান না হলে পুঁজিবাজারে গতি ফিরে পাবে না। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রানীতি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে পুঁজিবাজার ভালোভাবে পারফরম্যান্স করতে পারে। আর পুঁজিবাজার, বন্ড মার্কেট এবং ব্যাংক এ তিনটি খাতকে একটি শক্তিশালী সমন্বয়ের মাধ্যমে এগোতে হবে। এ তিনটি বিষয়ে সমস্যা রেখে জিডিপির গ্রোথের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শুরুতে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও শেষের দিকে সৃষ্ট পতনে নামতে থাকে সূচক। যদিও শেষ মুহুর্তে একবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭৬১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৮৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৭৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির, কমেছে ২৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৫০ কোটি ৪৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৭৮২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৯৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৬৮৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮০৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৫টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৯১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অর্থাৎ দেখে-শুনে, বুঝে এবং ভালো করে বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে পুঁজিবাজারের মুখ্য ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ রয়েছে। অর্থাৎ যাদের ট্রেড অফিশিয়াল বা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচাকেনার সঙ্গে সর্ম্পক রয়েছে, তারা বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে কতটুকু তাদের গ্রাহককে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে সেটাই দেখার বিষয়!
শুধু ব্যাংক এবং আথি’ক খাতের দর বৃদ্ধি পেলেই তো বিনিয়োগ কারীদের হতাশা অনেকাংশে কমে যায়,
তাই ব্যাংকখাতের শেয়ারদর বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেই মনে হয় সরকারের সমালোচনা কমে যেতে পারে,,,,