স্থিতিশীল অবস্থানে নেই দেশের পুঁজিবাজার। বাজার এক দিন বাড়লে দুই দিন কমে, আবার মাঝে মাঝে বাজার একটু বাড়লে পরের দিন অস্বাভাবিকভাবে কমে। অস্থিরতা যেন পিছু ছাড়ছে না। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর অর্থাৎ ৯ বছর ধরে প্রতিনিয়ত অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলভাবে চলছে পুঁজিবাজার। বাজারের এ রকম অবস্থা বিশ্বের আর কোনো পুঁজিবাজারে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যা হতাশজনক এবং বিনিয়োগকারীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে কোন প্রনোদনাই কাজে আসে না। উল্টো আরও বিপরীতমুখী অবস্থায় চলে যায়। যদিও আজ সূচকে কিছুটা উত্থান ঘটেছে। বেড়েছে লেনদেও। তবে স্বস্তিতে ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সূচকে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন না করে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের পদ্ধতিগুলো দুর্বল করে দিচ্ছে। এটি পুঁজিবাজারকে অনেক ক্ষতি করছে। আবার সরকার কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদি কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী এসে দেখে ১০ বছর পর দেশের পুঁজিবাজারে এ রকম অবস্থা, তাহলে কী দেখে তারা আসবে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তো দেশের পুঁজিবাজার দেখে আসবে। কিন্তু বাজার ভালো করার ক্ষেত্রে সমন্বিত যে উদ্যোগ, সেটি দেখা যায় না। অর্থাৎ সমন্বিত উদ্যোগই পারে পুঁজিবাজারের চিত্র পাল্টাতে। পাশাপাশি আমরা যদি বাজার উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যুগোপযোগি পরিকল্পনা করি, তাহলে এটিই হবে দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের অর্থ জোগানের প্রধান উৎস।

তারা বলছেন, বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজার যদি নিম্নগতিতে থাকে সে পুঁজিবাজার এক থেকে দুই বছরের মধ্যে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু ২০১০ সালে আমাদের পুঁজিবাজার ধসের পর এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরতে পারছে না। যদি একটি পুঁজিবাজার দীর্ঘ সময় ধরে এ রকম খারাপ অবস্থানে থাকে, তখন বাজারের নেতিবাচক বিষয়গুলো বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয়। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেট একে ওপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন ব্যাংকের সুদের হার কম থাকে তখন পুঁজিবাজার ভালো করে। আবার যখন ব্যাংকের সুদের হার বেশি হয় তখন সেটার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে। ইতোমধ্যে সরকার বাজারসংক্রান্ত অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও আসল কথা হচ্ছে ভালো মানের কোম্পানি আনা দরকার। কিন্তু সেটির কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই সূচকে উত্থান পতন লক্ষ্য করা যায়। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৭১৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৬৪২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৭টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৭টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৭১০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১০৮০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৩৮ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৯ কোটি ৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭২৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৮টির, কমেছে ১০৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার সমস্যা হচ্ছে সমন্বয়হীনতার অভাব। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে। নানাবিধ সার্কুলারে যখন পুঁজিবাজারে কোনো সমস্যা হয়, তখন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আসে না। যখন আসে, তখন সে সিদ্ধান্ত কোনো কাজে আসে না। আর এখানে শুধু বিএসইসি ও ডিএসইর একার দায়িত্ব নয়, এখানে কোম্পানিগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাজার ভালো করতে হলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর বড় সমস্যা হচ্ছে, অন্যান্য খাতের তুলনায় বাজার ও ব্যাংক খাতে অনেক সুশাসনের অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।