অবমূল্যায়িত অবস্থায় থাকায় পুঁজিবাজারে আজ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘমন্দায় তলানিতে থাকা পুঁজিবাজারে দেখা গেছে কিছুটা উত্থান। তবে লেনদেন রয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরেই। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে মুষ্ঠিমেয় কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা নিয়মনীতি সব বোঝেন। যেগুলো নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এখন ধারণা হয়েছে, এখানে বিনিয়োগ করলে তারা বিভিন্ন কৌশলে অর্থগুলো নিয়ে যাবে। এ কারণে বিও অ্যাকাউন্ট কমে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তাও কমে গেছে। এটাই প্রধান সমস্যা। আবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় না হবেন, ততক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসবে না। যদিও আজ কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সূচকে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যত বেশি সক্রিয় থাকবেন তত বেশি শেয়ারের দর বাড়বে। তখনই তারা লাভের মুখ দেখবেন বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।
কেউ কেউ বলছেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, সেভাবে পুঁজিবাজার গতিশীল না হলে অর্থাৎ পুঁজিবাজার তলানিতে রেখে দেশের অর্থনীতিকে বেশিদূর এগোনো যাবে না। তাই বাজারের গতিশীলতা বাড়াতে প্রয়োজন বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জন করা। অথচ সেটি না করে শুধু নিয়মনীতির মারপ্যাঁচের মধ্যে রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাদের মতো করে নিয়মনীতি তৈরি করে। বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান কাজ হবে কোম্পানিগুলো যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেগুলো যেন বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জন করতে পারে। এ বিষয়টি যতক্ষণ নিশ্চিত করা না যাবে, ততক্ষণ বাজার এভাবে চলতে থাকবে। কাজেই বিষয়টি নজর দেয়া জরুরি।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই ক্রয় চাপে বাড়তে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৭১২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৬৩৮ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯০টির, কমেছে ১২৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩২৫ কোটি ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ০.৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৬৮২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৭৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬২৭ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪০৫ কোটি ৪৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭৯ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৬৯০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫১টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬১টির, কমেছে ৭০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারে অনেক কোম্পানি রয়েছে, যাদের ইপিএস ভালো নয়, পিই রেশি অনেক, উৎপাদনে নেই, কোনো বোনাস লভ্যাংশও দেয় না। এসব কোম্পানি নিয়ে প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু তারপরও বিনিয়োগকারীরা ওইসব শেয়ার কিনে থাকেন। এসব শেয়ার কিনে লোকসানের মুখে পড়ে বিনিয়োগকারীরা দোষারোপ করা শুরু করেন। আসলে এখানে বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।