চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে চায় শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ (এসজেডএসই)। এজন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানিগুলো নিয়ে একটি বিশেষ সূচক চালুর উদ্যোগ নিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটি।
শিগগিরই এ সূচক চালু হবে। এর বিশেষ উদ্দেশ্য হবে, সম্পদ ব্যবস্থাপকদের লক্ষ্য রেখেই সূচকটি করা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা জানান শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক লিউ ফুজং। চীনের শেনঝেনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে চীন-বাংলাদেশ পুঁজিবাজার ও প্রযুক্তি সেমিনারে (চায়না বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট অ্যান্ড টেকনোলজি কনফারেন্স) এ মতবিনিময় হয়। ঢাকা ও শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ এ অনুষ্ঠানের আয়োজক। সহযোগিতা করছে এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল ও কিংডম টেকনোলোজি। এ অনুষ্ঠানে চীনের ৪০ ব্রোকারেজ হাউস ও ৫০ জনের অধিক বিনিয়োগকারী অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির অন্তত ৭০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
লিউ ফুজং বলেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকারীদের অনেকের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আছে। চীন-বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডরের অংশীদার হয়ে দুই দেশের স্টক এক্সচেঞ্জও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ডিএসইর সঙ্গে শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের অংশীদারিত্ব দৃঢ় ভিত্তি পাবে।
সেমিনারে শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ও সিইও উয়ান ঝেনজুন বলেন, ডিএসইর সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বের বয়স মাত্র এক বছর। এ সময়ে বিশ্বে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ডিএসইকেও এগিয়ে যেতে হবে।
আমরা সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এরই মধ্যে ভি-নেক্সট, এসএমই প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে সহযোগিতা করেছি। শিগগিরই অলটারনেটিভ প্ল্যাটফর্ম নামের বিনিয়োগের আরও একটি দ্বার খুলবে। পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিবেশ ও ডিজিটাল ব্যবস্থায় অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রেও আমরা সহায়তা দেব। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর ও আন্তরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে উয়ান ঝেনজুন আরও বলেন, ইতিমধ্যে বেল্ট অন রোড প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।
দেশের শেয়ারবাজারে চীনের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের প্রতি আহ্বান জানান ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম। চীনের বিনিয়োগকারীদের প্রতি তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি দ্রুত বর্ধনশীল, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের একটি রোড-মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমাদের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে আরও বিনিয়োগ দরকার। একই সঙ্গে দরকার জ্ঞান ও প্রযুক্তি, যা আপনাদের আছে। আপনারা খুঁজছেন বিনিয়োগের সুযোগ। এখানে আমরা উভয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে লাভবান হতে পারি।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের খুব ভালো অবস্থা বিরাজ করছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) মাত্র ১৩ ও বাজারমূল্যের বিপরীতে লভ্যাংশ আয় (ডিভিডেন্ড ইল্ড) ৫ শতাংশ।
পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশই হওয়া উচিত বিনিয়োগকারীদের প্রধান লক্ষ্য। মিনহাজ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ব্যাপক। দেশটির জনসংখ্যা ১৭ কোটি, এর মধ্যে আট কোটির বয়সই ২৫-এর নিচে। যেটা চীনেরও নেই।
আবার এখানে শ্রমিকদের মজুরি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। ফলে চীনের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ সুযোগ নিতে পারেন।
অনুষ্ঠানে চীনের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্সের চেয়ারম্যান ইফতি ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির আকার বর্তমানে ৩০০ কোটি ডলার।
অথচ এ দেশের শেয়ারবাজারের বাজারমূলধন মাত্র ৪৫ কোটি ডলার। দেশটি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আশা করা যায়, শেয়ারবাজার এখানে থাকবে না। এখনই যারা এ বাজারে বিনিয়োগ করবেন, তারাই বেশি মুনাফা পাবেন।
এবারের সম্মেলনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কৌশলগত অংশীদার হয়েছে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ। এই দুটি প্রতিষ্ঠান ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক। আর এই বিষয়টিকেই সামনে রেখে কীভাবে দেশটির আদলে স্টক এক্সচেঞ্জে কারিগরি বিষয়ে উন্নয়ন করা যায়, তা বিবেচনা করছে ডিএসই।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে গত বছরের ১৪ মে চীনা জোটের সঙ্গে চুক্তি সই করে ডিএসই। ওই চুক্তি অনুযায়ী, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা জোট ডিএসইর ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনবে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ২১ টাকা দরে মোট ৯৬২ টাকা পরিশোধ করেছে চীনা জোট। এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি সহায়তার জন্য আরও ৩০৭ কোটি টাকা দেয়ার চুক্তি করেছে দেশটি।