সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই সৃষ্ট ক্রয় চাপে টানা বাড়তে থাকে সূচক। আর এতে ভূমিকা রাখে আইসিবি, ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এমটিবি, আইডিএলসি এবং আর্থিক খাত। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও প্রায় দুই মাসের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। এদিন ডিএসইতে ৫৬০ কোটি টাকা টাকার বেশী লেনদেন হয়েছে। এর গত গত ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ৫৯৫ কোটি টাকা হয়েছিল। আজ ডিএসইর লেনদেন এগিয়ে নিতে বস্ত্র খাত ১৭.১০ শতাংশ, ব্যাংক ১৪.০৫ শতাংশ, ওষুধ ১৩.৮৬ শতাংশ, প্রকৌশল ১৩.৪৮ শতাংশ, বীমা ১১.০৬ শতাংশ, জ্বালানী ৭.২০ শতাংশ এবং আর্থিক খাত ৫.৫০ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা পতনের পর গত কয়েক দিন ধরে মার্কেট মোটামুটি স্ট্যাবল অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থাটি ধরে রাখতে পারলে বিনিয়োগকারীদের মনে দীর্ঘমেয়াদে আস্থা ফিরে আসবে। পাশাপাশি তারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগও করবে। সূচক কমে যাওয়া মানেই বাজার খারাপ হওয়া নয়। কারণ বাজারে অনেক সেক্টর রয়েছে। একটি সেক্টর খারাপ হলে সূচক কমতে পারে। কিন্তু লেগে থাকলেও অন্য সেক্টরগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা ঠিকই লাভবান হবেন। বর্তমান মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের ফান্ডামেন্টাল গ্রোথ দেখে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা উচিত। শুধু কোম্পানির নাম শুনেই বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। নেট অ্যাসেট ভ্যালু, আরনিং সোর্স, কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতে অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানিটি ভালভাবে টিকে থাকতে পারবে কিনা তা দেখে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা উচিত বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ তিন ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে। আর এ খাতের অর্থই পুঁজিবাজারে প্রবেশ করছে। কেননা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদ কমার পাশাপাশি অনেক বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এত কড়াকড়ি নেই। তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় নজরে রাখতে হয়। কারণ অনেক সময় ফান্ডামেন্টাল এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস কাজ করে না। সে কারণে ওই খাতের বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অনুসরণ করছেন।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৭২২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৭৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৩৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৪টির, কমেছে ১৩৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৫৬০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৬৯৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.৮১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৭৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৩৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৪৪ কোটি ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১১৬ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৬৯৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৯টির, কমেছে ৮৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৯৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আজ মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের কারণেই বাজার চাঙ্গা হয়েছে। আর বিনিয়োগকারীরা ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগহী হয়ে ওঠায় তুলনামূলক দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা কিছুটা কমেছে। তবে গত কয়েকদিন উত্থান-পতন থাকলেও বাজার এখন ইতিবাচক ধারায়। পাশাপাশি ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরও তলানিতে রয়েছে। অর্থাৎ দীর্ঘ মন্দার পর অনেক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত। তাই ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।