পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪০টিরও বেশি কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নেই। অনেক কোম্পানির পরিচালকরা ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার থাকা স্বত্ত্বেও ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো: শামসুল হুদা ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার থাকা স্বত্ত্বেও তিনি ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাকি যেসব কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে রাইট ওফার, আরপিও, বোনাস শেয়ার, কোম্পানি একীভূতকরণসহ কোনো প্রকারের মূলধন উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া কোনো পরিচালক যদি এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়; তাহলে এই শূন্য পদ পূরণ করতে যাদের এই ২ শতাংশ পরিমাণ শেয়ার আছে তাদের থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিচালক মনোনীত করার জন্য বিএসইসি’র নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত উদ্যোক্তা পরিচালকগণ সম্মিলিতভাবে এই শেয়ারধারণে ব্যর্থ হলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ওই কোম্পানির জন্য একটি আলাদা ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

এদিকে পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার থাকা স্বত্ত্বেও যারা শেয়ার বিক্রি করেছেন তাদের ক্ষেত্রেও আলহাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো: শামসুল হুদার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।

উল্লেখ্য, মো: শামসুল হুদা বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা ছাড়া ২০ হাজার শেয়ার বিক্রির অভিযোগ উত্থাপিত হয় যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ রেগুলেশনস, ২০১৫ এর বিধান লঙ্ঘন। এছাড়া উক্ত কোম্পানির স্পন্সর ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মোট শেয়ারহোল্ডিংয়ের পরিমাণ ৩০ শতাংশ এর নিচে থাকায় এটি কমিশনের নোটিফিকেশন এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৯৩/১১৯/এডমিন/৩৪ নভেম্বর ২২, ২০১১ এরও লঙ্ঘন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে দেখা যায়, মো: শামসুল রহমান হুদা ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলহাজ্ব টেক্সটাইলের ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৪১টি শেয়ার বিক্রি এবং ৯ হাজার ১০০টি শেয়ার ক্রয় করেছেন ট্রেক হোল্ডার এএনএফ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে। তিনি উক্ত ট্রেক হোল্ডার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। লেনদেনের ফলে কোম্পানির মোট শেয়ারহোল্ডিং ৩০ শতাংশের আরো নিচে নেমে আসে। এছাড়া কমিশনের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এর রুল ৮(১)(সিসিসি) অনুযায়ী কাস্টমার অ্যাকাউন্ট ইনফর্মেশন ফর্ম (ফর্ম ১এ) এ অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালক হিসেবে তিনি কোনো তথ্য প্রদান করেননি। অধিকন্তু চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি কোম্পানি অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা পাওয়ার প্রসঙ্গে একটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে, যা পরবর্তীতে সঠিক নয় বলে প্রতীয়মান হয়।

আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার ক্রয়, বিক্রয়, কাস্টমার অ্যাকাউন্ট ইনফর্মেশন ফর্ম (ফর্ম ১এ) এ অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালক হিসেবে কোনো তথ্য প্রদান না করা, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে বিধি-নিষেধ থাকাকালীন সময়ে শেয়ার লেনদেন করার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিশিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫ এর বিধি ৪ এর উপবিধি (২) এর বিধান লঙ্ঘন এবং ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মো: শামসুল হুদার আলহাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ার লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর ১৪ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেছেন। এসব আইন ভঙ্গ করার অপরাধে মো: শামসুল হুদার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এনফোর্সমেন্টের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত তার সমস্ত সিকিউরিটিজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া এএনএফ ম্যানেজমেন্ট কো: লিমিটেডের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ এনফোর্সমেন্ট বিভাগে প্রেরণে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং আলহাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ার লেনদেন স্পট মার্কেটে লেনদেন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ জুন,২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরে ছিল ৩০.২০ শতাংশ। সেখানে কোম্পানিটির পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বর্তমানে এ কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১২.৭৮ শতাংশ।