অনিয়ম ও খেলাপি ঋণের দায়ে ডুবতে বসা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) অবসায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তাই স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধের মেয়াদ আরো ১৫ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার ডিএসই জানিয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে আরো ১৫ দিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ হিসেবে আগামীকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।
এর গত ১১ জুলাই ডিএসই’র এক পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী, পরবর্তী কার্যদিবস অর্থাৎ ১৪ জুলাই থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপ লেনদেন বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে। আর গুলশান ও চট্টগ্রামে দুটি শাখা রয়েছে।
পিপলস লিজিংয়ে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি দেখানো হয়েছে ৭৪৮ কোটি টাকা, যা ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এর মোট শেয়ারের ৬৭ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে।
বাকি শেয়ারের মধ্যে স্পন্সর ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।
গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পিপলস লিজিং বন্ধ হলেও আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট আমানতের তুলনায় তাদের সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, যত দ্রুত সম্ভব আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এবং নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম।
তারা জানান, পিপলস লিজিংয়ের আমানতের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ বেশি। তাদের আমানতের পরিমাণ দুই হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বিপরীতে সম্পদ আছে তিন হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এ কারণে আমানতকারীদের শঙ্কার কিছু নেই।
সূত্র আরও জানায়, পিপলস লিজিংয়ে নানা অনিয়ম, বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ এবং চরম অর্থ সংকটের কারণে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ২২(৩) এবং ২৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। সম্মতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় গত ২৬ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়।
চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আটকে থাকা আমানতের পরিমাণ, অনিয়মের ধরন, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ও মাসিক বেতন-ভাতার পরিমাণ উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়।