আমাদের পুঁজিবাজার বর্তমানে অনেকটা ভীতির মধ্যে রয়েছে। তাই বাজার গতিশীল করতে হলে বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজারে মোট ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। গত দুই থেকে তিন বছরে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে অব্যবস্থানা, সুশাসন এবং খেলাপি ঋণ নিয়ে। সে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর এখন সবচেয়ে কম। বাজার ভালো করতে হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। তার সঙ্গে সুশাসন ও খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমাতে হবে। একটি পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। যেটা বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। যদিও ২০১৭ সালে মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে ছিল। অর্থাৎ ২০১০ সালে বাজারধসের পর এখন বাজার খারাপ অবস্থানে রয়েছে। শেয়ারদর কমতে কমতে এমন জায়গায় এসেছে যে এত কম দরেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে ভরসা পাচ্ছেন না বলেও মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, পুঁজিবাজার টেকসই করতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। আস্থা বাড়াতে হলে সুশাসন নিশ্চিত ও অর্থের প্রবাহ বাড়াতে হবে। না হলে বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। কারণ, বিনিয়োগকারীরা এলেই তাদের অর্থ বিভিন্নভাবে নিয়ে যান। এখন বাজার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না এবং এখানে শৃঙ্খলাও নেই। প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, তার রাষ্ট্রযন্ত্র কী সেভাবে সহযোগিতা করছে। সরকার ১০ হাত এগোলে তার রাষ্ট্রযন্ত্র দুই হাত পেছনে যায়। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার নির্দেশ দিয়েছেন বাজারকে ভালো করার জন্য। বিএসইসি ও ডিএসই এ কয়েক মাসে এমন কী করেছেন যে, বিনিয়োগকারীরা নতুন পুঁজি নিয়ে আসবেন। বাজারের এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আসলে নতুন বিনিয়োগ আসার কোনো সুযোগও দেখা যাচ্ছে না। নতুন বিনিয়োগ আসতে হলে আস্থা বাড়াতে হবে। গত ৯ বছরে বাজার কারসাজিকারীদের কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, বলা হচ্ছে তারা এক কোটি টাকা কারসাজি করেছে; কিন্তু জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা! এটা তো তার পক্ষে গেছে। এটি কোনো শাস্তি হতে পারে না। তাহলে বাজার কীভাবে ভালো হবে? সিপিডির এক সম্মেলন বলেছে, বাজারে এখনও সাত থেকে আট জায়গায় সমস্যা রয়েছে। কাজেই বাজার উন্নয়নে নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে একত্রে বসা উচিত।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই সেল প্রেসারে টানা নামতে থাকে সূচক। বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭৩৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৮৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৪৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ২৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৮৯ কোটি ৯৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৭৭৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ০.০৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৬৪ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৯২ কোটি ৫০ লাখ ৪২ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৬৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৬০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫১টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৩টির, কমেছে ১৭৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটের উন্নয়নের বিকল্প নেই। বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেট দিয়ে চলে তাদের অর্থনীতি। তাই সেকেন্ডারি মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেকেন্ডারি মার্কেটের উন্নয়ন হবে না ততক্ষণ বিনিয়োগকারী আসবে না। কারণ একটি পুঁজিবাজার টিকে থাকে সেকেন্ডারি মার্কেট দিয়ে। কাজেই একে ওপরকে দোষারোপ না করে একসঙ্গে কিভাবে বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে সকলের মনোনিবেশ করা উচিত বলেও মনে করছেন তারা।