প্রত্যাশিত গতি ফিরে পাচ্ছে না দেশের পুঁজিবাজার। স্বল্প মূলধনিসহ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যাচ্ছে। আমরা বলি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে কিন্তু সেটিও দেখা যাচ্ছে না। বাজারের প্রকৃত বিনিয়োগকারী কমে যাচ্ছে। বাজারকে স্থিতিশীল অবস্থানে রাখা যাদের দায়িত্ব বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না করে ডে-ট্রেডিং বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। এখানেই বড় সমস্যা। তাহলে কীভাবে বাজার গতিশীল হবে? কয়েক বছর ধরে বাজারে তারল্য ও আস্থার সংকট চলছে। এখন ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। যদি ভালোমানের মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ডসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য থাকত, তাহলে শেয়ারের দর কমে গেলে ওইসব পণ্যে বিনিয়োগ করে বাজার স্থিতিশীল রাখা যেত। যেটা বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারে রয়েছে। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে বাজার সংক্রান্ত অনেক নিয়মনীতি করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যদি নিয়মনীতিগুলো বাস্তবায়ন হতো, তাহলে বাজারের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও অসামঞ্জস্যতা দূর হতো। প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য এক আইন ও স্পন্সরসহ বড় বিনিয়োগকারীর জন্য আরেক আইন প্রভৃতি কারণে যেসব বিনিয়োগকারী চলে গেছেন, তারা আবার ফিরে আসতেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয়। ম্যানুপুলেশন সব জায়গাতেই হয়। কিন্তু বিএসইসির তৎপরতায় আমাদের দেশে এসব অনেকটা কমে এসেছে। তবে আমাদের দেশের মিউচুয়াল ফান্ড দুঃখজনকভাবে তেমন অবদান রাখতে পারেনি মার্কেটে। তাই এই আইন-কানুনগুলো আরও শক্ত করতে হবে। আর একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অথচ আমাদের দেশের পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে নিম্নগতির দিকে যাচ্ছে। যার মূল কারণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই। কাজেই আস্থা ফেরাতে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে বলেও মনে করছেন তারা। বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। বুধবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫১৩৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৯২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮১৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ২৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৫৬ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫১৭৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৯৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৮২৯ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৫৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৫৫৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৬৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ১৮৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ১ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার সঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি হচ্ছে। কিছু ব্যক্তির স্বার্থের কারণে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে না এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী বাজারে আস্থা ফিরে পাচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে এবং আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ফলে সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে ওইসব কালোবাজারিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে সঠিকভাবে বিচার করা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।