সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে সূচকে কিছুটা অস্থিরতা থাকলেও বেড়েছে লেনদেন। যদিও দিনশেষে উত্থান থাকে কিনা সেটা নিয়ে একটা সংশয় ছিল। দিনশেষে সে সংশয় দূর হলেও বাজার চিত্র দেখে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারের উন্নতি না হওয়ার একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে, অধিকাংশ বিনিয়োগকারী মনে করে এটি একটি দৈনিক বেচাকেনা করার জায়গা। এখানে তাদের স্বল্প সময়ে অধিক লাভের প্রবণতা থাকে। আসলে কিন্ত তা নয়। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। তাছাড়া আমাদের দেশে কোম্পানির সম্প্রসারণ বা নতুন শিল্পায়নের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার কথা। আর দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ ঋণের জন্য পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করার কথা, যা অধিকাংশ দেশগুলোতেই হয়ে থাকে। যদি আমাদের দেশের বড় প্রকল্পগুলোর জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যেত তাহলে বাজার সম্প্রসারিত হতো। আর পুঁজিবাজার যখন ঊর্ধ্বগতিতে থাকে তখন সব জায়গা থেকে বিনিয়োগকারী আসতে থাকেন। আবার যখন বাজার নিম্নগতিতে থাকে তখন বিনিয়োগকারীরা ভয় পান। অথচ এটির বিপরীত হওয়া উচিত ছিল। অর্থাৎ যখন বাজার নিম্নগতিতে থাকবে, তখন বিনিয়োগে আসা উচিত। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ অবস্থা তৈরি করতে পারেনি বলেও মনে করছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি সরকার বাজার ভালো করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর কোনো ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে না। কারণ, যে বাজার ছয় হাজার সূচক অতিক্রম করেছিল, এখন তা চার হাজার ৭০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এটি আসলে হতাশাজনক। একজন বিনিয়োগকারী তার সঞ্চিত অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করে ন্যূনতম হলেও লাভ করবেন সে ভরসাটুকুও পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হচ্ছেন। পুঁজিবাজার অর্থনীতি উন্নয়নের একটি শক্তিশালী অংশ ভাবতে হবে। সেটি বিবেচনা করা শুধু কথার কথাই নয়। সত্যিকার অর্থে কীভাবে বাজারকে অর্থনীতির শক্তিশালী অংশ করা যায়, সেভাবে এগোতে হবে এবং সক্রিয় থাকতে হবে। অর্থমন্ত্রী এ বাজারকে নিয়ে বিভিন্ন সময় সভা করেছেন। অর্থাৎ, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব থাকা প্রয়োজন। গত দুই মাস আগে একটি সভা করা হয়েছে, যেখানে আইসিবির বিপরীতে একটি সংস্থা গঠন করা হবে। যদি আইসিবি বাজারকে সমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়, সেখানে ওই সংস্থা সহযোগিতা করবে। কথা হচ্ছে, সেটা যেন বাজারের কাজে লাগে। আবার যারা বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে, তাদেরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সেভাবে ভূমিকা পালন করছে না। একটি বাজার দীর্ঘ সময় ধরে খারাপের দিকে যাচ্ছে; কিন্তু একই ব্যক্তিকে বারবার একই দায়িত্ব দিচ্ছে। আসলে সময় এসেছে এখান থেকে বেরিয়ে আসার।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরুতে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও শেষ দিকের ক্রয় চাপে উত্থানে ফিরে সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৭২২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০৮৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৬৫২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৬টির, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪০৯ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৭১৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১০৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৬৪২ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৪৫ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭০৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩৭টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৬টির, কমেছে ১১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে উঠা-নামা থাকবেই। সব পুঁজিবাজারে উঠা-নামার একটি ধারাবাহিকতা থাকে। কিন্তু সেটা এ বাজারে দেখা যাচ্ছে না। আসলে বাজারে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। অনেকে বলেন বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থার সংকট রয়েছে। কেন বিনিয়োগকারীর আস্থার সংকট? এর পেছনে মূল সমস্যা ভালো মানের ইকুইটির অভাব। দীর্ঘদিন ধরে ভালো মানের শেয়ার আসছে না, যা আসছে সবই স্বল্পমূলধনি। যখনই এসব কোম্পানি বাজারে আসে, শুরুতে এসব শেয়ারের দর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু পরে সেটা আর ধরে রাখতে পারে না। এর মূল কারণ এসব কোম্পানি ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় না। এজন্যই বাজারের এ অবস্থা। সাবেক অর্থমন্ত্রী সরকারি প্রায় ২৭টি কোম্পানি আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চার থেকে পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একটি কোম্পানি বাজারে আসেনি। দেশে বেসরকারি ও বহুজাতিক অনেক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে সেগুলোও আনার ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এটাও আস্থাহীনতার একটি কারণ। এখন আবার বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। গত ১০ বছরে জিডিপির আনুপাতিক হারে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। অর্থাৎ ২২ থেকে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।