ক্যাসিনোর চেয়েও বড় আতঙ্কের নাম শেয়ারবাজার। নিঃস্ব লাখ লাখ পরিবার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিদিনই হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজারমূলধন। শুধু গত ৭ মাসেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন কমে গেছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে।

শুধু বিনিয়োগকারী নয়, শেয়ারবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে সর্বস্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার নারীও তার সঞ্চয়ের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলেছে। ব্রোকারেজ হাউসের কয়েক হাজার চাকরিজীবীও দিশেহারা। চাকরি নেই, তাই চলছে না সংসারের চাকাও। মিশন থেকে ফিরে আসা বহু কর্মকর্তার বিপুল অংকের টাকাও খোয়া গেছে এই রাক্ষুসী শেয়ারবাজারে। বিপরীতে বহাল তবিয়তে আছে ডাকসাইটে ডাকাতরা। যারা বারবার শেয়ারবাজারে ইচ্ছেমতো লুটপাট চালিয়েছে। এছাড়া শুধু দেশের মানুষের নয়, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে এসে চীনা কোম্পানিরও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে।

চক্রটির লুটপাট এমন স্তরে গিয়ে ঠেকেছে যে, তারা ৫০ টাকার শেয়ার ২ টাকায় নিয়ে এসেছে। এর কারণটাও হতবাক করার মতো। সর্বস্ব খুইয়ে তারা জানতে পেরেছে ৫০ টাকা দিয়ে যে শেয়ার কেনা হয়েছে সেই কোম্পনির কোনো অস্তিত্বই নেই। এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তার দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না। কেননা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে তাদেরকে বসানো হয়েছে।

প্রথম লুটপাট হয়েছে দুর্বল কোম্পানির অনুমোদন ও বেপরোয়া প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের মাধ্যমে। বাজারে এমন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ যারা লুট করেছেন, তাদের অনেকেই সভা, সমাবেশ ও সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে মানুষকে জ্ঞান দিচ্ছেন। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির উন্নয়নেও তারা উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এমন দৃশ্য দেখে সরকারের ওপর ভুক্তভোগীদের ক্ষোভের ঝাঁজ আরও বাড়ছে। তাদের কয়েকজন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, অনতিবিলম্বে তাদেরকে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে একদিন গণআদালতে এদের বিচার হবেই হবে। ইতিমধ্যে এছাড়া বিনিয়োগকারীরা সংবাদ সম্মেলন করে এদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।