নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেট ধাক্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বেশকিছু প্রণোদনা দেয়া হলেও এ বাজেট ঘোষণার পর উভয় বাজারে বড় দরপতন দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজি হারিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, এভাবে প্রতিদিন শেয়ার প্রতি দর কমতে থাকলে সপ্তাহ শেষে মোটের ওপর বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন। এমনিতেই টানা পতনে তাদের অবস্থা শোচনীয়। এরপর সূচকের পতন হলে তাদের ধৈর্য থাকবে না। ফোর্সসেল দিয়ে অনেকেই বের হয়ে যাবেন। বড় ধরনের পতনের মুখে পড়বে পুঁজিবাজার। এ অবস্থায় বাজার-সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়া উচিত। বাজারে ধস শুরু হলে উদ্যোগ নিয়ে কোনো লাভ হবে না। কাজেই সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নেওয়া জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটে রিজার্ভের ওপর ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাবের কারণে বাজারে একধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানির প্রসারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে। যার একটি নেতিবাচক প্রভাব গত দুদিন যাবৎ পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, মন্দা পরিস্থিতিতে আজ অন্যান্য খাতের যেখানে দৈন্যদশা। সেখানে উল্টো ভেল্কি দেখিয়েছে বীমা খাত। আজ এ খাতে থাকা ৪৭টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টিরই শেয়ার দর বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য কৃষি বীমা এবং গবাদি পশুর বীমা চালুর প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা এবং প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালুরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর বীমা সংক্রান্ত এসব সিদ্ধান্ত বিশেষ চমক বলে উল্লেখ করে এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি ও গবাদি পশুর বীমা চালু করা হলে সাধারণ কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড ব্যাপক আকারে সম্প্রসারিত হবে। কেননা দেশের উৎপাদনশীল কৃষি পণ্য ও গবাদি পশু বীমার আওতায় আসলে কৃষক ও খামারিরা যেমন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। তেমনি বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। এতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী সম্প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের প্রচলিত গ্রুপ বীমার পরিবর্তে সমন্বিত জীবন বীমা ও প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা চালু করা হলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পরিধিও অনেক বিস্তৃত হবে।
আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের ব্যাপক পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫৩৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২২৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮৮৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ২৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৫৩৫ কোটি ২৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৪৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫৪৩০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২৩৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৯০৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩৪ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৭৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৯৯৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৭০টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ১৮৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।