পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ঘোষিত স্টক ডিভিডেন্ড এবং বাড়তি রিটেইনড-আর্নিংসের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ ট্যাক্সারোপের সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত ডিভিডেন্ড আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার ঘোষণা বহাল রাখেন। শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাজেটের সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হলো, এই কর আরোপের ফলে প্রত্যক্ষ কর বাড়বে, ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে এবং বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে চায় না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রস্তাব বিবেচনার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের বিবেচনা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করেন। ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড দিলে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হন। এইসব বিষয় বিবেচনা নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ড দেবে কমপক্ষে তার সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানির ঘোষিত স্টক ডিভিডেন্ডর পরিমাণ বেশি হয় তাহলে পুরো স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ক্যাশ ডিভিডেন্ড উৎসাহিত করতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি আর্নিংস রিজার্ভ ইত্যাদি থাকলে অতিরিক্তি আর্নিংস রিটার্নের ওপর ১৫ শতাংশ  কর আরোপ করা হয়েছিল। যদিও এ বিষয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হলো, জমাকৃত (পুঁঞ্জিভূত) মুনাফা, একুমোলেটেড প্রফিট, কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। কোম্পানির সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, দেশি বিদেশি কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য অধিক পরিমাণ পুঁজির প্রয়োজন। তবে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সে প্রেক্ষাপটে ধারাটি অংশিক সংশোধন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি, কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভ অর্থ্যাৎ নেট প্রফিট আফটার ট্যাক্সের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস ফান্ড, রিজার্ভ সারপ্লাস ইত্যাদিতে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কোম্পানিকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ষ্টক ও ক্যাশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এভাবে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছর রিটেইন আর্নিংস ফান্ড, রিজার্ভ, সারপ্লাস এ স্থানান্তরিত মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।