পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অবসায়ন হচ্ছে এমন খবর প্রচারের পর থেকেই কোম্পানিটির করুণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। গ্রাহকরা তাদের টাকা উত্তোলনের জন্য ঢাকার মতিঝিলের সিটি সেন্টারে অবস্থিত কোম্পানিটির অফিসে ভীড় জমিয়েছেন। অন্যদিকে কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করার জন্য সেল অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু গ্রাহক ও বিনিয়োগকারী উভয়কেই নিরাশ হতে হচ্ছে।

গ্রাহকরা কোম্পানির কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য গেলে কোম্পানির পক্ষ থেকে ফান্ড না থাকার কারণ দেখিয়ে টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি অর্ডার দিলে কেউ কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে রাজি হচ্ছেন না। যে কারণে ক্রেতা সংকটে আজ কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়েছে। লিক্যুইডেশনের খবরের পর গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০ শতাংশ কমেছে, আজ কমেছে ৮.৩৩ শতাংশ। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এ কোম্পানির শেয়ার দর ৩.৩০ টাকায় নেমে এসেছে। আজ সারাদিনে কোম্পানিটির ৭১৩৫২টি শেয়ার মাত্র ২৪বার হাতবদল হয়ে লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে এ কোম্পানির দেড় কোটিরও বেশি শেয়ার বিক্রির জন্য সেল অর্ডার পড়ে রয়েছে। কিন্তু কোনো ক্রেতা না থাকায় কোম্পানিটির লেনদেন হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৫ সালে কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম প্রদান করে আসছিল। গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। পিপলসের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ। ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি।

পিপলসের আমানতের ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। প্রায় ৬ হাজার সাধারণ গ্রাহকদের আমানত রয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। আবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা তো দূরের কথা, সুদও দিতে পারছে না। আর ভাবমূর্তি–সংকটে পড়ে নতুন তিন বছরের বেশি সময় ধরে আমানত আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

কোম্পানিটির অফিস মতিঝিলের সিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন আমানতকারী টাকা তোলার অপেক্ষা করছেন। পিপলসের কর্মকর্তারা তাঁদের আশ্বাস দিচ্ছেন, টাকা আদায় হলেই দেওয়া হবে। কিন্তু কবে দেওয়া হবে, তার কোনো দিনক্ষণ বলতে পারছেন না। এর কারণ জানতে চাইলে পিপলসের কর্মকর্তারা জানান, টাকার অভাবে তাঁদের বেতনই সঠিক সময়ে হচ্ছে না। গ্রাহকদের টাকা কীভাবে ফেরত দেবেন।