মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে (Close-end Mutual Fund) লভ্যাংশ হিসেবে আগামী দিনে আর রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট (আরআইইউ) বা বোনাস দেওয়া যাবে না। এই সুযোগ বন্ধ করতে শিগগিরই মিউচুয়াল ফান্ডের আইন সংশোধন করবে। তখন থেকে কেবল নগদ লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।
আজ ২৮ এপ্রিল, রোববার পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও শীর্ষ ২০ ব্রোকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন এ আশ্বাস দিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী, অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা ও খন্দকার কামালুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, মো. সাইফুর রহমান ও মো. মাহবুবুল আলম। ডিবিএর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী, ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও ও পরিচালক মোহাম্মদ আলী। এছাড়া শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের ন্যুনতম শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, সেটি কঠোরভাবে পরিপালনে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা হবে। এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন তারা।
উল্লেখ, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ন্যুনতম শেয়ার ধারণের আইন করে বিএসইসি। এই আইন অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালকের কমপক্ষে ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। আর সম্মিলিতভাবে থাকতে হবে ৩০ শতাংশ শেয়ার। কোনো পরিচালকের ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার পদ শূন্য হয়ে যাবে। অন্যদিকে সম্মিলিতভাবে স্পন্সর বা উদ্যোক্তাদের ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে ওই কোম্পানি রিপিট আইপিও, রাইট শেয়ার ইত্যাদি ইস্যু করতে পারবে না।
অন্যদিকে কোনো সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ৫ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারের মালিক হলে তিনি ওই কোম্পানির শুন্য পদে পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। তবে তাকে পরিচালক মনোনীত করার বিষয়টি কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের ষভায় অনুমোদন পেতে হবে।
আজকের সভায় ডিবিএর পক্ষ থেকে ৫ শতাংশ শেয়ার থাকলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালক হওয়ার প্রস্তাব হয়। বিএসইসি এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিষয়টি কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি সংক্রান্ত জটিলতার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। চলতি বছরেই একটি কার্যকর বন্ড মার্কেটের সূচনা হবে।
মার্কেট মেকার চালুর বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ বিষয়ে তারা কাজ করছেন। কিছুদিনের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রোকারহাউজগুলোর পক্ষ থেকে মার্কেট মেকারের তহবিলকে ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ গণনার (Capital Market Exposure) এর বাইরে রাখার আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, ৬৩টি মার্কেন্ট ব্যাংক আছে। এদের প্রত্যেকের ন্যুনতম মূলধন ২৫ কোটি টাকা। এই টাকা বাজারে আছে কি-না দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আইন অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যুনতম ৬০ ভাগ তহবিল সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ করার কথা। অনেক অ্যাসেট ম্যানেজার তা করছে না। এটির বিষয়েও আমরা খোঁজখবর নেব।
ডিবিএ ও ব্রোকারদের পক্ষ থেকে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের বিষয়টি তোলা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা চাইলে আমরা আর মূলধন বৃদ্ধি (Capital Raising) বা প্লেসমেন্ট অনুমোদনের দায়িত্ব আমাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেব। কোম্পানিগুলোর উপর বিষয়টি ছেড়ে দেব। তখন কোনো কোনো সঙ্কট তৈরি হলে কিন্তু আমাদেরকে কিছু বলতে পারবেন না। এর জবাবে সবাই বিএসইসির কাছেই এই দায়িত্ব রাখার অনুরোধ জানান। তবে এ বিষয়ে একটু সতর্ক থাকা এবং সময়োপযোগী একটি নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলেন। তারা প্লেসমেন্ট শেয়ারে লক-ইনের মেয়াদ প্রসপেক্টাস অনুমোদনের দিন থেকে কার্যকর না করে শেয়ার লেনদেন শুরুর দিন থেকে গণনা করার প্রস্তাব করেন। যুক্তি হিসেবে বলেন, নানা প্রক্রিয়া শেষ করে একটি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরু হতে বছর খানেকের মতো লেগেই যায়। তাই প্রসপেক্টাস অনুমোদনের দিন থেকে লক-ইন গণনা করা হলে শেয়ার লেনদেন শুরুর কিছু দিনের মধ্যে তা বিক্রির উপযোগী হয়ে পড়ে এবং বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়।
Source: Arthosuchak