পুঁজিবাজারে দরপতন চলছেই। মুনাফার আশায় কষ্টার্জিত সঞ্চয় লগ্নি করে প্রতিনিয়ত মূলধন হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যতই বিনিয়োগ করছেন, দরপতনের কারণে তাদের পুঁজি অতলগহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ ধস নামার পর থেকে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পুঁজিবাজার। এটা যেন এক বিশাল মরুভূমি। যেখানে আশ্রয় পাওয়া খুবই দুষ্কর। বাজারের এই বেহাল পরিস্থিতি কবে কাটবে সেটা জানা নেই কারো। দরপতনের কারণে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারিয়ে অনেকেই বাজার ছেড়েছেন। নতুন যারা আসছেন, তারাও টিকতে পারছেন না, লোকসান করে এদেরও অনেকে নিষ্ফ্ক্রিয়। পোড় খাওয়া বিনিয়োগকারীরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মূলত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ৮০ শতাংশের বেশি মানহীন এবং নতুন করে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত করেনি। বাজারে প্রকৃত বিনিয়োগকারী, বিশেষত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ নেই। ব্যক্তি বিনিয়োগকারী থেকে প্রতিষ্ঠান– সকলে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। দায়িত্বশীল পদে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোক না থাকা। এমনকি গ্রামীণফোনের দর পতনও বর্তমানে নাজুর পরিস্থিতির জন্য দায়ি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ডিএসইতে চলতি বছরের ৪ আগস্ট গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ার ৩৩৭ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। আজ ওই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার ২৯৪ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারদরে বড় ব্যবধানে কমেছে। শুধু সর্বশেষ এক মাসেই নয়, গত তিন মাসে প্রায় ১৪ শতাংশ দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। চলতি বছরের এপ্রিলের প্রথম কার্যদিবসে ৪১৭ টাকায় উঠেছিল গ্রামীণফোনের শেয়ারদর। এরপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারদর আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ফলশ্রুতিতে ডিএসইতে গ্রামীণফোনের শেয়ারদর এখন দুবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূচকের হ্রাস–বৃদ্ধিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে গ্রামীণফোন। সম্প্রতি এ কোম্পানির নেতিবাচক খবরে এর শেয়ারদর কমতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে টানাপড়েন চলছে। এর জেরে কোম্পানিটির লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে গ্রামীণফোনের শেয়ারদরে।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫০০৭ পয়েন্টে। ডিএসইতে অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই–৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৬৭ ও ১৭৫৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৩৯টি কোম্পানির মধ্যে ১০৯টি বা ৩২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দাম কমেছে ১৬৯টি বা ৫০ শতাংশ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬১টি বা ১৮ শতাংশ কোম্পানির। এগুলোর ওপর ভর করে দিনশেষে ডিএসইতে ৩৯৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৪৮ কোটি টাকা কম। আগে দিন লেনদেন হয়েছি ৪৪২ কোটি ৯০ লাখ টাকার।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫০৩৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১৭২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৭৭৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বাড়ে ১০০টির, কমে ২০৯টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ৪৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৪৪২ কোটি ৯০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১০৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩০৩ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ১৩৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দর। আজ সিএসইতে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট–ব্যক্তিরা বলছেন, গুটিকয় ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বাইরে শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্নেষণ করেন। কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বাইরে মালিকদের বিষয়েও খোঁজখবর নেন। এ বিচার–বিশ্নেষণ করে ৯০ শতাংশ শেয়ারকে বাতিল করে দেন। বছরের পর বছর একই শেয়ারে বিনিয়োগ করে তারা টায়ার্ড। নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো ভালো শেয়ার না পাওয়ায় অনেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। তার আগে মন্দ কোম্পানিকে সরিয়ে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।