সম্প্রতি পুঁজিবাজারের দরপতনে তীব্র আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। আর তাদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন।

সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে বাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান সবার মতামতের ভিত্তিতে বাজার পরিচালনার আশ্বাস দেন। তিনি বিদ্যমান অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াসহ সব সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে দূরত্ব থাকা উচিত নয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকে বিএসইসির কমিশনারসহ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। পূর্বনির্ধারিত এ বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭-এর সংশোধন ইস্যুতে মতবিনিময়’ ছাপিয়ে গতকাল সাম্প্রতিক দরপতন এবং শেয়ারবাজারের নানা অনিয়মের বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার বিষয়টিও উঠে আসে।

বৈঠকে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক দরপতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকাকে প্রধান কারণ বলে তুলে ধরেন। তারা বলেন, শেয়ারবাজারের সব পর্যায়ে সুশাসনের অভাবই মূলত সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। স্টেকহোল্ডারদের নেতাদের অভিযোগ, বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার সুযোগে একের পর এক মানহীন কোম্পানি আইপিওতে আসছে। এগুলো বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি বাজারের প্রতি অনাস্থা বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে তারা ভালো কোম্পানি আইপিওতে আনার উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, নিশ্চিত ও বড় মুনাফার আশায় আইপিও ও প্লেসমেন্ট শেয়ারের পেছনে এখন বড় বিনিয়োগকারীরাও ছুটছেন। এ কারণে প্লেসমেন্ট ও আইপিও শেয়ারে বিনিয়োগে অর্থের অভাব না থাকলেও সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট চরমে উঠেছে। এতে দরপতন দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

স্টেকহোল্ডারদের বেশ কিছু প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, এ ধারা চলতে থাকলে শেয়ারবাজার আরও নাজুক হয়ে পড়বে। তখন শুধু সেকেন্ডারি বাজার নয়, প্লেসমেন্ট ও আইপিওতেও বিনিয়োগকারীদের দেখা মিলবে না। সেকেন্ডারি বাজারে কাঙ্ক্ষিত দর না পেলে কেউ এসব শেয়ার কিনবেন না। তখন সংকটও প্রকট হবে। এমন ধারা চলতে থাকলে ভালো কোম্পানির উদ্যোক্তারাও শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবেন না।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন অনেকে। তারা বলেন, এসব উদ্যোক্তা-পরিচালক আর্থিক হিসাবে গরমিল করে শেয়ারদর বাড়াতে কারসাজি করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হওয়ায় অন্যরাও অনিয়মে জড়াচ্ছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোভে পড়ে এসব শেয়ার কিনে প্রায়ই ঠকছেন। মাঝেমধ্যে নামমাত্র শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা অপরাধের তুলনায় অপ্রতুল, যে কারণে কারসাজি থামছে না। অবিলম্বে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার নেওয়ার আহ্বান জানান স্টেকহোল্ডাররা। এসব বক্তব্যের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ সময় খায়রুল হোসেন জানান, সাম্প্রতিক দরপতন নিয়ে তিনি ও অর্থমন্ত্রী উদ্বিগ্ন। দরপতন রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরেন তিনি। ওই সময় অর্থমন্ত্রী বাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।