ব্যবসা বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় হোয়াইট ফিশ (তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কই, সরপুঁটি-জাতীয় মাছ) উৎপাদন করবে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। এজন্য উপজেলায় স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোট ১০১ একর জমি ইজারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট জমির মালিকদের সঙ্গে ইজারা চুক্তির ব্যাপারে কাজ করছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিচ হ্যাচারির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অনেক দিন ধরেই মন্দা যাচ্ছে। টানা তিন বছর বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির পারফরম্যান্স পর্যালোচনাধীন রেখেছে। এ অবস্থায় কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে ব্যবসা বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। হোয়াইট ফিশ উৎপাদন এ উদ্যোগেরই অংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত বিচ হ্যাচারির ১৭১তম পর্ষদ সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় কোম্পানিটির পর্ষদ ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হোয়াইট ফিশ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য ১০১ একর জমি ইজারা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জমির মালিকদের সঙ্গে ইজারা চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শিগগিরই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে বলে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে ব্যবসা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিলে বারামুডি, কোরাল, ইন্ডিয়ান স্যামন-জাতীয় হোয়াইট ফিশ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয় বিচ হ্যাচারির পর্ষদ। এক্ষেত্রে রিসার্কুলেটিং অ্যাকোয়াকালচার সিস্টেম (আরএএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যার মাধ্যমে দুটি সমান ফেজে বছরে মোট ২ হাজার ৪০০ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে কোম্পানিটি নরওয়েভিত্তিক অ্যাকোয়াঅপটিমা এএস ও এর স্থানীয় এজেন্ট অ্যাজাইল রিসোর্সেসের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি বিচ হ্যাচারি। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৭ পয়সা। ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১০ টাকা ৫০ পয়সা। ২০১৭ হিসাব বছর ও ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্যও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি তারা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৬ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১০ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ২৪ পয়সা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার বিচ হ্যাচারির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১৪ টাকা। সমাপনী দর ছিল ১৪ টাকা ১০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৯ টাকা ৯০ পয়সা ও ২৪ টাকা ২০ পয়সা।

২০০২ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ১৪ লাখ ১ হাজার ২১। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৩ দশমিক ১১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য টেকনাফে বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের কিছু জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে হ্যাচারির মূল স্থাপনা ভাঙা পড়ে। চলতি বছর ডিএসই কোম্পানিটির কারখানা ও প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পায়। গত তিন বছর ধরেই কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ডিএসই।