খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ
লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। খান ব্রাদার্স গ্রুপের
অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে
কাঁচামাল অপসারণের মাধ্যমে প্রায় ১৪ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এ ফাঁকি উদ্ঘাটন ও প্রতিষ্ঠানকে পৃথক দাবিনামা-সংবলিত কারণ
দর্শানোর নোটিস জারি করেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত খান ব্রাদার্স পিপি
ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের
অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে ২০১৮ সালে বন্ড
কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টিম পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠানটির গাজীপুরের বড়চালা, বড় ভবানীপুর
ও জয়দেবপুর ওয়্যারহাউজ পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে প্রতীয়মান হয় প্রতিষ্ঠানটি পিপি
ইয়ার্ন, এইচডিপিই, পলিপ্রোপাইলিন ও এলডিপিই শুল্ককর পরিশোধ ছাড়াই বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে
অপসারণ করেছে বা চোরাপথে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।
ইউপি যাচাই ও বন্ড রেজিস্টার আড়াআড়িভাবে যাচাই করে পরিদর্শন টিম
দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল অপসারণ
করেছে। পৃথকভাবে প্রায় ১২ কোটি ৮৪ লাখ, প্রায় ৮২ লাখ ৭৩ হাজার ও চার লাখ ৭৭ হাজার টাকার
শুল্ককর ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এসব শুল্ককর পরিশোধে ২০১৮ ও চলতি বছর পৃথকভাবে দাবিনামা-সংবলিত
কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা বা শুনানিতে উপস্থিত
না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির
বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। আমরা বন্ডেড ওয়্যারহাউজে
কম কাঁচামাল পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে, শুল্ককর ফাঁকি দিতে তা অপসারণ করা হয়েছে। প্রায়
১৪ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বন্ডিং কার্যক্রম
খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যদিও কাঁচামাল অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন
খান ব্রাদার্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল কবির খান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন,
‘বন্ড কমিশনারেট
কমিটি গঠন করে তদন্ত করছে। তারা প্রতিবেদন দেবে।’ বন্ড কর্মকর্তারা বন্ডেড
ওয়্যারহাউসে গিয়ে কাঁচামাল পায়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল
সঠিক ছিল। অবৈধভাবে অপসারণ করব কেন?’
সূত্রমতে, খান ব্রাদার্স গ্রুপ অব কোম্পানিজের ৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স
শিপ বিল্ডিং লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক, খান ব্রাদার্স নিওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ
লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনাল, শিপিং লাইন, খান ব্রাদার্স স্লিপওয়েজ এন্ড
ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এসএএল গ্রিন
অ্যালায়েন্স পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ফেসভ্যালুতে দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার
থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাগ
উৎপাদন ও বিদেশে রফতানি করে। চট্টগ্রামভিত্তিক খান ব্রাদার্স গ্রুপের কোম্পানিটির মোট
প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ
উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও সাধারণ
বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার
রয়েছে। আয়-মুনাফা-লভ্যাংশ কমার কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদরও দুই বছরের
সর্বনিন্ম অবস্থানে রয়েছে। ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ১১ টাকা
৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।