পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪৭ কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ রয়েছে। যেসব কোম্পানির পরিচালকদের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নেই; তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে নোটিফিকেশনে সংশোধন আনছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সূত্র বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ২-সিসি এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ক্ষমতা বলে এ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন সংশোধন করবে। যা খুব শিগগিরই নোটিফিকেশন আকারে প্রকাশ করা হবে।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, উদ্যোক্তা ও পরিচালক সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ সবচেয়ে ব্যর্থ হয়েছে ফাইন ফুডস লিমিটেড। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ রয়েছে ১.০৯ শতাংশ। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৯৮.৯ শতাংশ। কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ রয়েছে দশমিক ০১ শতাংশ।

এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইনটেক অনলাইন কোম্পানি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ রয়েছে ৩.৯৭ শতাংশ। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৮৫.২৮ শতাংশ। কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ রয়েছে ১০.৭৫ শতাংশ।

আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ফ্যামিলি টেক্স বিডি কোম্পানি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ রয়েছে ৪.০২ শতাংশ। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৭৭.৫৭ শতাংশ। কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ রয়েছে দশমিক ১৮.৪১ শতাংশ।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারধারণ রয়েছে ৪.১৬ শতাংশ। সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৭০.১৩ শতাংশ। কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ রয়েছে দশমিক ১৩.৫৩ শতাংশ। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ রয়েছে ১২.১৮ শতাংশ।

তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলো- ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুডস, আইএফআইসি ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেমস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, একটিভ ফাইন, বেক্সিমকো ফার্মা, ফাস ফাইন্যান্স, জেনারেশন নেক্সট, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন জুট, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, মিথুন নিটিং, ইস্টার্ন ক্যাবলস, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা স্পিনার্স, মেঘনা লাইফ, এপেক্স ট্যানারি, বেক্সিমকো, অ্যাপলো ইস্পাত, অলেম্পিক এক্সসেসরিজ, উত্তরা ব্যাংক, দুলামিয়া কটন, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, সিএনএ টেক্সটাইল, স্যালভো কেমিক্যাল, বিডিকম অনলাইন, পিপল লিজিং, জাহিন স্পিনিং, কে অ্যান্ড কিউ, ফার্ম এইডস, সেন্ট্রাল ফার্মা, মেট্রো স্পিনিং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি থাই, বে-লিজিং, ম্যাকসন স্পিনিং, আফতাব অটোস, এমারেল্ড অয়েল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কনফিডেন্স সিমেন্ট।

যারা শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এই শর্তগুলো আরোপ করা হতে পারে।

১। স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে সব উদ্যোক্তা ও পরিচালকের সম্মিলিতভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণ থাকতে হবে।

২। যদি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে এই শেয়ারধারণে ব্যর্থ হয়; তবে স্টক এক্সচেঞ্জ ওই কোম্পানিকে একটি আলাদা ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করবে।

৩। আর এই কারণে ওই কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা কোনো রকম শেয়ার বিক্রি, স্থানান্তর, হস্তান্তর, কোম্পানি একীভূতকরণ করতে পারবে না। তবে ঋণ খেলাপি ও মূত্যুজনিত শেয়ার স্থানান্তরের বিষয়টি এর বাইরে থাকবে।

৪। ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানি রাইট ওফার, আরপিও, বোনাস শেয়ার, কোম্পানি অ্যামালগামেশনসহ কোনো প্রকারে মূলধন উত্তোলন করতে পারবে না।

৫। যদি কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধরণে ব্যর্থ হয়; তাহলে তার পরিচালক পদ তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল হবে। তবে কোম্পানি বা ইনস্টিটিউশনের মনোনিত পরিচালকের ক্ষেত্রে নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণ থাকতে হবে। অর্থাৎ ৩ জন মনোনিত পরিচালকের জন্য ৬ শতাংশ শেয়ারধারণ থাকতে হবে।

৬। যদি কোনো পরিচালক এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধরণে ব্যর্থ হয়; তাহলে এই শূন্য পদ পূরণ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে করতে হবে। এই কাজটি সম্পন্ন করবে ওই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বা কোম্পানির বোর্ড।

বিএসইসি বলছে, এই সিদ্ধান্তগুলো আগামী কমিশন সভায় উপস্থিত হবে। সভায় অনুমোদনের পর নোটিফিকেশন জারি করা হবে। আর এই নোটিফিকেশন জারি হওয়ার পর এ সংক্রান্ত আগের যতো নোটিফিকেশন আছে তা রহিত হয়ে যাবে।