সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ারবাজার নিয়ে প্রতারণার দায়ে মাহবুব সারোয়ারকে ২ বছরের জেল দেওয়া হলেও অন্যদের প্রতারণা এখনো বন্ধ হয়নি। কোন বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকেই টাকার বিনিময়ে আইটেম (কোম্পানির নাম) দিয়ে বেড়াচ্ছেন। যেসব আইটেম দিগুন-তিনগুণ বাড়বে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে। তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফাদেঁ ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে কেউ কেউ এদের থেকে সতর্ক থাকার জন্য ফেসবুকে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন গ্রুপে সচেতনতামূলক পোস্টও দিচ্ছেন।

শেয়ারবাজারের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ফেসবুকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রচারের দায়ে জনৈক মাহবুব সারোয়ারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন। আসামি শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির আগাম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ফেসবুকসহ অন্যান্য ওয়েব পোর্টালে প্রচার করতেন। এ সব খবরের মধ্যে রয়েছে- কোন কোম্পানির শেয়ার দর কত বাড়বে, কোনটির দর কত কমবে, কোন কোম্পানি ব্যবসায় ভাল করবে ইত্যাদি খবর অগ্রিম প্রকাশ করতেন। এ সব খবরে প্রলুব্ধ হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেন। কিন্তু পরে ওই মিথ্যা খবরে ক্ষতির কবলে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে খবর ছড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশের আগে মাহবুব সারোয়ার নিজে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে নিতেন। কোন কোম্পানির শেয়ার দর বাড়বে খবর প্রকাশের আগে নিজে ওই শেয়ার কিনে নিতেন। আর খবর প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীরা ওই শেয়ার ক্রয়ে ঝুঁকে পড়লে মাহবুব সারোয়ার তা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করতেন। এ ছাড়া তিনি এ সব খবর প্রকাশের মাধ্যমে ফিও নিতেন।

মাহবুব সারোয়ারের শাস্তিতেও টনক নড়েনি প্রিন্স সিএসই ডিএসই, এমডি মাসুদুর রহমান, আকিজ আলীসহ অন্যান্য ফেসবুক পরিচালনাকারীদের। যে কারনে তারা এখনো প্রতারণা করে যাচ্ছেন।

শেয়ারবাজারে আইটেম দিয়ে বেড়ানো প্রিন্স সিএসই ডিএসই নামক ফেসবুকধারী ১টি আইটেমের জন্য ৭ হাজার টাকা নেন। আর ২টির ক্ষেত্রে ৪ হাজার টাকা করে নেন। যিনি কোন আইটেম কতদিনে কত শতাংশ বাড়বে তা জানেন।

এদিকে এমডি মাসুদুর রহমান নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকার বিনিময়ে আইটেম দেওয়া হয়। তিনি ২টি আইটেমের জন্য ৭ হাজার টাকা নেন। আর ১টির জন্য ৫ হাজার টাকা। এসব আইটেম পেতে হলে প্রতারকদের টাকা অগ্রিম বিকাশ করতে হয়। তবে ওইসব আইটেমে মুনাফা করতে না পারলে, প্রতারকরা টাকা ফেরত দেওয়ারও নিশ্চয়তা দেন। তিনি কোম্পানিকে টাকা দিয়ে আইটেম কিনেন বলে দাবি।

মাহমুদ হাসান নামের এক প্রতারণাকারী ৩০ শতাংশ লাভ তাকে দেয়ার শর্ত দিয়ে আইটেম দেন। তার তিন আইটেম নেয়া শাহাবুদ্দিন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, মাহমুদ হাসান ৩০ শতাংশ লাভ দেয়ার শর্তে ওপেন সবাইকে আইটেম দেন। তিনি শতভাগ নিশ্চয়তা দেন যে, তার আইটেম খুব শিগগির দ্বিগুণের বেশি হবে। কিন্তু শাহাবুদ্দিনের তিনটি আইটেমই এখন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ তার মুলধনের অর্ধেক টাকা দুই মাসের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে আইটেম বিক্রয়ের কোন বৈধতা নেই। আইটেম বিক্রেতারা শেয়ারবাজারের জন্য ক্ষতিকর। এদেরকে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। একইসঙ্গে ওইসব প্রতারকদের থেকে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।