সাপ্তাহিক ব্যবধানে অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় ইতিবাচক ধারায় অবস্থান করছে দেশের উভয় পুঁজিবাজার। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিন কমলেও বাকি দুই দিনের উত্থানে ইতিবাচক ধারায় ফিরে সূচক। পাশাপাশি কিছুটা বেড়েছে লেনদেনও। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগসীমা অর্থাৎ এক্সপোজার লিমিট নিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আবার আইসিবিকে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। এর ফলে অস্থিরতার মধ্যেও সূচক কিছুটা ইতিবাচক। এতে সপ্তাহশেষে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় সামান্য হলেও স্বস্তি পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বাজারের দৈনিক টার্নওভার ৩০০ কোটির নিচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ৭৫০ কোটি টাকা তো দুদিনের লেনদেন। সুতরাং ৭৫০ কোটি টাকা দিয়ে বাজারের খুব একটা উন্নতি করা যাবে না। বাজার ভালো করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ এবং পদ্ধতিগতভাবে এগোতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।
তারা আরও বলছেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর অনেক নিয়ন-নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড, ইসলামিক বন্ড, শর্ট সেলের আইন হয়েছে এবং এর সঙ্গে স্মল ক্যাপিটাল বাজার বোর্ড গঠন করা হয়েছে। স্মল ক্যাপিটালে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারবেন না। এখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি ক্ষোভ রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা হচ্ছে, বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাবেচা করবেন। যদিও এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় করা হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কি? যেমন, কোনো একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লে সেটির জন্য জবাবদিহিতা করতে হয়। কিন্তু যখন কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম কমে, তখন সেটির কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। পুঁজিবাজারের স্বার্থে এটি চালু করা জরুরি।
এদিকে, সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ডিএসইএক্স ১৯.৮১ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১৪.৬১ পয়েন্ট বা ০.৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৩২ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ সূচক ৪.৬৬ পয়েন্ট বা ০.৩৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১৯২ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭১টির কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৪৩টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির এবং লেনদেন হয়নি ২টির। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন মোট ১ হাজার ৭৯৩ কোটি ২ লাখ ১ হাজার ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। তবে এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৫১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩৩ টাকার। সেই হিসাবে সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৩৩১ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার ২২১ টাকা বা ২২.৬৮ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৯৮৪ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৮৭ দশমিক ৫১ শতাংশই ছিল এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি শেয়ারের ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির।
অন্যদিকে, সপ্তাহশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪০ পয়েন্ট বা ০.২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪১ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ২১ পয়েন্ট বা ০.২২ শতাংশ ও সিএসই-৫০ সূচক ৪ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ হাজার ৭০৮ পয়েন্ট ও ১ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট বা ০.২০ শতাংশ ও সিএসআই ৪ পয়েন্ট বা ০.৬৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৩ হাজার ৯৭৫ ও ১ হাজর ৪২ পয়েন্টে। আর সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে হাতবদল হওয়ার ২৯৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৪টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। এগুলোর ওপর ভর করে বিদায়ী সপ্তাহে ১১২ কোটি ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৪৫ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আমাদের পুঁজিবাজারের সমস্যা অর্থ বা তারল্যের অভাব নয়। আমাদের মূল সমস্যা বিনিয়োগ উপযোগী ভালো শেয়ারের অভাব। এটি ঘোচাতে হবে। সবাই চেষ্টা করে ভালো কোম্পানি আনলে প্রকৃত অর্থেই উপকৃত হবে পুঁজিবাজার। আর বিনিয়োগকারীদের নিজেদের জ্ঞানটুকু কাজে লাগাতে হবে। কেননা আত্মরক্ষার ভালো উপায় হলো, জ্ঞানকে প্রয়োগ করা। এ বাজারের উলফদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে সাধারণদের টিকে থাক কঠিন। কাজেই যতটা পাওয়া যায়, ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে এও সত্য, কিছু কথিত ভালো কোম্পানির শেয়ারও বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। কিন্তু যে ঠকায়, সে একবার ঠকায়; সে কেন বারবার ঠকাবে? জেনে শুনে একই ভুল বিনিয়োগকারীরা কেন করবেন। লোভ সংবরণ করতে হবে। কেননা সামনে বাজেটসহ পুঁজিবাজারের জন্য আরও ভালো সময় আসছে বলেও ধারনা তাদের।
Source: pujibazar.com