দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিন সূচক বাড়ালেও বাকি দুই কার্যদিবস পতনের মাত্রা ছিল তুলনামূলক বেশি। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে সব সূচকেই পতন ঘটে। সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরও। তবে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমান কিছুটা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির শেষের দিক থেকে বাজারে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। সম্প্রতি বাজার ভালো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার পরেও কোনোমতেই ছন্দে ফিরছে না বাজার। ২০১০ সালের পর যেসব মৌলভিত্তির কোম্পানি আসছে, সেগুলোর দরও কমে যাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা কাজ করছে। এতে একদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউজ মালিকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। আর বাজার যখন খারাপ অবস্থানে যায়, তখন একে অপরকে দোষারোপ করে। বাজার খারাপ হওয়ার জন্য কাউকে দোষারোপ না করে একসঙ্গে বসে কীভাবে বাজার ভালো করা যায়, তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও কয়েকটি কোম্পানির কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। কিন্তু সেটা বিনিয়োগকারীদের কতটা সন্তুষ্ট করতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। কেননা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন উপায়ে কারসাজি হচ্ছে, কিন্তু তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। বিশেষ করে যারা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ বা এককভাবে দুই শতাংশ শেয়ার ধরে রাখছে না, তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইনে কী বলা আছে, সেটি পরিষ্কার করে বলতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। আবার এদের শাস্তি না দিয়ে বিভিন্নভাবে কোম্পানিগুলোর বোনাস শেয়ারে বিভিন্ন ধরনের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যারা বাজারকে অস্থিতিশীল করছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? কয়েকদিন আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি কোম্পানি অবসায়ন করা হয়েছে। ওই কোম্পানি থেকে যারা ঋণ নিয়েছে এবং পরে ঋণকৃত অর্থ ফেরত না আসায় কোম্পানিটি একপর্যায়ে তারল্য সংকটে পরে। ফলে কোম্পানিটি অবসায়ন করা হয়েছে। যারা ঋণ দিয়েছে এবং যারা অর্থ ফেরত দেয়নি তারাই মূল অপরাধ করেছে। কথা হচ্ছে যারা অর্থ দিয়েছে ও নিয়েছে তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে পুঁজিবাজারে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।

এদিকে, সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১ পয়েন্ট বা ০.৬২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট বা ১.০৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বা ০.৭৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১৩৮ পয়েন্ট এবং ১৭৫৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৩৭টির বা ৩৯ শতাংশের, কমেছে ১৯৩টির বা ৫৪ শতাংশের এবং ২৫টির বা ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে ডিএসইতে ১ হাজার ৯৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০৮ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ৯৮ লাখ ৩৮ হাজার ২০৭ টাকা বা ০.০৫ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৮৯ লাখ ৫১ হাজার ৩০৫ টাকার। আর ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯০১ টাকার। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছিল ৩৯১ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ২৬১ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে গড় লেনদেন ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪০ টাকা বেড়েছে।

অপরদিকে,চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ পয়েন্ট বা ০.৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৩৯ পয়েন্ট বা ০.৪২ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ৬ পয়েন্ট বা ০.৪৪ শতাংশ এবং সিএসআই ৮ বা ০.৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ হাজার ১২২, ১ হাজার ১০৪ ও ৯৮০ পয়েন্টে। তবে সিএসই-৩০ সূচক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১২২ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের হাত বদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২৭টির, দর কমেছে ১৫৩টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির। সপ্তাহজুড়ে ১৫০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৭ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০৯ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৬১৪ টাকার। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ৪১ কোটি ৮০ লাখ ৭ হাজার ২৭৩ টাকা বা ৩৮ শতাশ বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে লাভ-ক্ষতি দুই-ই আছে। অর্থাৎ ঝুঁকি স্পষ্ট। ঝুঁকির কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে রাখতে হবে ঝুঁকিহীন কোনো বিনিয়োগ পৃথিবীতে নেই। আপনি যেকোনো কিছুতেই বিনিয়োগ করেন না কেন, ক্ষতির ঝুঁকি আছে। আর একটা দার্শনিক সত্যি, সবাই জানেন যে ঝুঁকির সঙ্গে লাভের একটা ধনাত্মক সম্পর্ক আছে। ঝুঁকি বেশি হলে লাভের সম্ভাবনা থাকে, তবে ঝুঁকি নেওয়ার আগে ঝুঁকির পরিমাপ চাই। তারপরও বলব, জরুরি প্রয়োজনের জন্য দরকারি টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসবেন না বলেও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।