ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের চাপে নগদ লভ্যাংশ দিতে পারছে না অনেক ব্যাংক। ইচ্ছা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে উপেক্ষা করতে হয়েছে সে সিদ্ধান্ত। সে কারণেই দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংক ২০১৮ সাল শেষে স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৪টি ব্যাংক সম্পূর্ণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এবছর। এছাড়া পুরোটাই বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ ভাগ করে দেওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছে অন্যান্য ব্যাংকগুলো।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর তথ্যমতে মাত্র ৪টি ব্যাংক পুরোটা নগদ লভ্যাংশ ও ৮টি ব্যাংক নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ ভাগ করে দিয়েছে এবার। বাকি সব ব্যাংকই ঘোষণা করেছে শুধুমাত্র বোনাস। যা খুব একটা পছন্দ করেন না পুঁজাবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এবছর আমরা পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি। শেষ পর্যন্ত পুরোটাই আমরা বোনাস হিসেবে উল্লেখ করেছি।
ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের যথাক্রমে ১০ শতাংশ, ১০.৬২৫ শতাংশ, ১১.২৬ শতাংশ, ১১.৮৭৫ শতাংশ এবং ১২.৫০ শতাংশ । যেখানে ব্যাসেল-২ অনুযায়ী ব্যাংক সমূহকে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হত। উল্লেখ, ব্যাংকের ঋণ, আমানত, খেলাপিসহ সকল সম্পদই ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অংশ।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতিনীতি অনুযায়ী একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ২০১৬ সাল থেকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের অতিরিক্ত হারে মূলধন রাখতে হচ্ছে। প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৬২৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন রেখে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গিয়ে একটি ব্যাংককে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ মূলধন রাখতে হবে। অতিরিক্ত এ মূলধনকে ব্যাংকিং পরিভাষায় আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় বা কনজারভেশন বাফার বলা হয়।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ সৃষ্টি করার কিছু নেই। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে সব ব্যাংককে ঝুঁকিকৃত সম্পদের সাড়ে ১২ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। তারা সেটাই করছে। কিন্তু যাদের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে তারা চাইলেও নগদ লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের কারণে নয় বরং তাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বোনাস লভ্যাংশ দিলে শেয়ারহোল্ডরদের নগদ আয় কমে যায়। একারণে তারা নগদ লভ্যাংশ পছন্দ করে। তবে ব্যাংকগুলো যদি তাদের মূলধন বাড়িয়েও আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে তাহলে সবার জন্যই ভালো। কিন্তু ঠিকমত মুনাফা করতে না পারলে সবার জন্যই ক্ষতি।