পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি মানেই আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ড। তাই বিনিয়োগকারীরাও বেশি ডিভিডেন্ড পাওয়ার আশায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর এতোটাই বেশি যে বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত রিটার্ন আসে খুবই কম।
উল্লেখ্য, শেয়ারের বাজার মূল্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফেসভ্যালুর চেয়ে বেশি হয়। তাই ডিভিডেন্ডের হার প্রকৃত রিটার্ন নির্দেশ করে না। এজন্য প্রয়োজন হয় ডিভিডেন্ড ইল্ড বের করা। এটাই হচ্ছে শেয়ারের সঠিক রিটার্ন।
বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রাপ্য লভ্যাংশ বিনিয়োগের কত শতাংশ তাই হচ্ছে ডিভিডেন্ড ইল্ড। ঘোষিত লভ্যাংশকে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য দিয়ে ভাগ করলে ডিভিডেন্ড ইল্ড পাওয়া যায়। এই ইল্ড যত বেশি হবে বিনিয়োগকারীর প্রাপ্তিও তত বাড়বে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১০ বহুজাতিক কোম্পানির (রেকিট বেনকিজার, মেরিকো বাংলাদেশ, গ্লাক্সো স্নিথক্লাইন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাক্যো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি), লিন্ডে বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি, গ্রামীন ফোন, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, রেনেটা এবং হেইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড) ডিভিডেন্ড ইল্ড নিম্নে তুলে ধরা হলো:
রেকিট বেনকিজার
রেকিট বেনকিজার ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৭০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৭০ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ২৫০০ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৭০/২৫০০)* ১০০= ২.৮০%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ২.৮০ শতাংশ।
মেরিকো বাংলাদেশ
মেরিকো বাংলাদেশ ৩১ মার্চ, ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৬৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৬৫ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ১৭৯২ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৬৫/১৭৯২)*১০০ = ৩.৬৩%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ৩.৬৩ শতাংশ।
গ্লাক্সো স্নিথক্লাইন
গ্লাক্সো স্নিথক্লাইন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৫৩ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ১৬৫৮ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৫৩/১৬৫৮) *১০০= ৩.২০%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ৩.২০ শতাংশ।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাক্যো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি)
বিএটিবিসি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৫০ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ১২২২ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৫০/১২২২) *১০০= ৪.০৯%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ৪.০৯ শতাংশ।
লিন্ডে বাংলাদেশ
লিন্ডে বাংলাদেশ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩৭৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৩৭.৫০ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ১২৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৩৭.৫০/১২৯৫) *১০০= ২.৯০%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ২.৯০ শতাংশ।
বাটা সু কোম্পানি
বাটা সু ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩৪৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৩৪.৫০ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ৯৬৯ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৩৪.৫০/৯৬৯) *১০০= ৩.৫৬%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ৩.৫৬ শতাংশ।
গ্রামীন ফোন
গ্রামীন ফোন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৮০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ২৮ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ৩২৪ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (২৮/৩২৪) *১০০= ৮.৬৪%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ৮.৬৪ শতাংশ।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ
বার্জার পেইন্টস ৩১ মার্চ, ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ২৫ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ১৫৫৫ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (২৫/১৫৫৫)*১০০ = ১.৬১%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ১.৬১ শতাংশ।
রেনেটা
রেনেটা লিমিটেড ৩০ জুন, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৯৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৯.৫০ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ১১৯৩ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৯.৫০/১১৯৩)*১০০ = ০.৮০%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ০.৮০ শতাংশ।
হেইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড
হেইডেলবার্গ সিমেন্ট ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৭৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেসভ্যালুর এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৭.৫০ টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ২৩০ টাকা। এক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড ইল্ড হচ্ছে (৭.৫/২৩০) *১০০= ৩.২৬%। অর্থাৎ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন হচ্ছে ৩.২৬ শতাংশ।