পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানামুখী উদ্যোগ নিলেও কিছুতেই থামছে না দরপতন। বাজারের যে অবস্থা তাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। কোনো একটি বিষয়ে যখন আস্থার সংকট দেখা দেয়, তখন সেই সংকট উত্তরণে যে দৃশ্যমান উদ্যোগ থাকার কথা, সেটিও দেখা না যাওয়ায় আস্থার সংকট তীব্রতর হয়ে উঠছে। ২০১০ সালের পর বাজারে ইক্যুইটির সরবরাহ বেড়েছে, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। কারণ প্রতিবছরই বেশিরভাগ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে অধিক হারে বোনাস শেয়ার ধরিয়ে দিচ্ছে। এটি আসলে কতটুকু যুক্তিসংগত। এখানে বিএসইসির হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বিএসইসি সেটা করছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের প্রতি সবসময় নেতিবাচক। বিশ্বের প্রত্যেকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দেশের পুঁজিবাজারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ নেয়। অথচ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যা দরকার, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিপরীতমুখী। তাই শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্সপোজার সমস্যা সমাধান করে কিনা তা নিয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ। যা বাজার পতনের গতি প্রভাবিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, আস্থার সংকটে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি হওয়ায় গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে। এর বাইরে খেলাপি ঋণ, অফশোর ইউনিটের ঋণের বিপরীতে বিধিবদ্ধ জমা ও ডলার কেনায় ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থ আটকে গেছে। এর ফলে অর্থবছরের গত আট মাসে ব্যাংকের বিনিয়োগযোগ্য অতিরিক্ত তারল্য কমেছে অর্ধেকের বেশি। কাজেই আর্থিক খাতগুলোর মধ্যে সুদহার সমন্বয় করা প্রয়োজন, নইলে বিশৃঙ্খলা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় নেই। তারা ইচ্ছা করেই বাজারে দরপতন ঘটাচ্ছে! মূলত বাজার একটি চক্রের হাতে জিম্মি রয়েছে। তারাই কৃত্রিমভাবে বাজারের দৃশ্যপট পরিবর্তন করছেন, যার প্রভাবে প্রতারিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে উত্থান থাকলেও কিছুক্ষণ পর সৃষ্ট বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। বুধবার সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫১৯৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৮১২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ১৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৫টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৫৬ কোটি ২৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫২১৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২০৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮২৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ২৫১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৪ কোটি ৯১ লাখ ৩ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৬৩২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২০৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির, কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে এখন যেভাবে পতন চলছে, এর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মূলত বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক কারণেই পতন চলছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের উচিত শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রাখা। তাদের আবেগি না হয়ে বাস্তববাদী হওয়া উচিত। কারণ বাজারে এখন অধিকাংশ শেয়ারই বিনিয়োগযোগ্য। এ অবস্থায় বাজার নিন্মমুখী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু তারপরও তা হচ্ছে। এটা হতে পারে বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণ। ভয় পেয়ে যখন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, সে প্রভাব অন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বাজারে দ্রুত পতন নেমে আসে। কাজেই বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে বলেও ধারনা তাদের।