পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য অর্থমন্ত্রী বাজারসংশ্লিষ্টদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভাও করেছেন। কিন্তু বাজারের আশানুরূপ কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। আসলে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে তারল্য সংকট রয়েছে। এর পাশাপাশি বাজারে আস্থার সংকটও রয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে এর প্রভাব পড়ে। যদিও আজ সূচকে কিছুটা উত্থান হয়েছে। কিন্তু তাতে স্বস্তি পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। মূলত বাজারে কাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়গুলো যতদিন পর্যন্ত সমাধান না হবে, ততদিন বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে আসবে না। তাছাড়া গত আট থেকে ৯ বছরে আইপিও’র মাধ্যমে যে কোম্পানিগুলো বাজারে এসেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই খারাপ অবস্থানে রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন কোম্পানিগুলোয় এ রকম অবস্থা বিরাজ করছে? আসলে এ বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে না। যদি বিষয়গুলো সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করা হয়, তাহলে বাজারে আস্থার সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, বাজারে কোন ধরনের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য, অর্থাৎ এ ধরনের বিষয়গুলোর কোনো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না। আবার বস্ত্র খাত ও আরএমজির ক্রমান্বয়ে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। যেমন কোনো ব্যক্তি ২০ বছর আগে একটি ব্যবসা শুরু করেছেন। এখনও তিনি ওই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কথা হচ্ছে, এখন ব্যবসার ধরনে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ওই ব্যক্তি কি সেভাবে পরিবর্তন করতে পেরেছেন বা তার পরিবর্তে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি আছে। এখন যদি এ ধরনের কোম্পানি বাজারে আইপিও হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে বাজারের কী অবস্থা হবে? দেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা ও ভালো প্রফিট করছে। দেশ থেকে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিষয়গুলো সরকারের বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও ৪০ মিনিট পর ক্রয় প্রেসারে বাড়তে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচক কিছুটা বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৭৮২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০৯৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৬৮৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১৮০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

অথচ এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৭৭০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১০৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৭৯ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৩ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৪০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৮টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৪টির, কমেছে ১১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। কিন্তু বিনিয়োগকারীর পরিকল্পনা হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি। এখানে বাজারে বড় সমস্যা। বাজার একটু বাড়লেই এবং সামান্য কিছু মুনাফা হলেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেন। কারণ আবার কখন বাজারে টানা দরপতন শুরু হয়, এটা নিয়ে তারা চিন্তিত থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এভাবে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা বেশিরভাগ সময় ক্ষতির মুখে পড়েন। বাজারে অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে। এসবের মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানি পাবেন যাদের ব্যবস্থাপনা, আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ দেওয়ার হার, ব্যবসা, স্পন্সর ও ইপিএস ভালো। এর চেয়ে আরও বেশি আছে। এসব কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আর যদি বিনিয়োগকারী সব কোম্পানিতে দেখতে চান, অর্থাৎ কেন ওই কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলÑএটা তো বিনিয়োগকারীর জানার দরকার নেই। কারণ বিনিয়োগকারী জানেন ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা, স্পন্সর, আরনিং এবং ডিভিডেন্ট পলিসি প্রভৃতি ভালো নয়। কেন ওই শেয়ার কিনতে যাব। এখন বাজারের যে অবস্থা, অর্থাৎ এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বাজারে মানিপ্রবাহ বাড়াতে হবে। বাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা পেলে বাজারের গভীরতা এমনিই বাড়বে বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।