পতনের ধারা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসই ইতিবাচক ছিল সূচক। ফলশ্রুতিতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মূলধনের পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচক বেড়েছে। তবে টাকার পরিমাণে ডিএসইতে কিছুটা কমলেও সিএসইতে বেড়েছে লেনদেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন দেশের অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করতে পারে পুঁজিবাজার। আর এ বাজারকে অস্থীতিশীল রেখে কোন দেশের অর্থনীতির ভিত কিছুতেই শক্তিশালী হতে পারে না। আমাদের দেশের সরকার দেড়িতে হলেও এ সত্যটা অনুধাবন করতে পেরেছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার পুঁজিবাজার সংস্কারে মনোনিবেশ করেছে। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পক্ষ থেকেও বিনিয়োগ বাড়ানো জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই দীর্ঘপতনের পর পর্যবেক্ষণে থাকা বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সক্রিয় হচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে ঈদের পর বাজারে একটি ইতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে বলেও মনে করছেন তারা।
তবে কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত নতুন নতুন অনেক আইন হচ্ছে। আইন তৈরি করা কঠিন কোনো কাজ নয়। যে আইনটি করা হচ্ছে সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি নতুন নতুন আইন করে যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে না পারে তাহলে আইন করে লাভ হবে না। কেননা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন উপায়ে কারসাজি হচ্ছে, কিন্তু তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। বিশেষ করে যারা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ বা এককভাবে দুই শতাংশ শেয়ার ধরে রাখছে না, তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইনে কী বলা আছে, সেটি পরিষ্কার করে বলতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মূল কথা বাজারে যখন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন আইন করে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা যাবে না।
এদিকে, সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৫.৪৩ পয়েন্ট বা ০.৬৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩৬.৮৫ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৪.৬৩ পয়েন্ট বা ১.২৩ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১২.২৬ পয়েন্ট বা ০.৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২০৬.৮৪ পয়েন্ট এবং ১৮৫০.০১ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন করা ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২১২টির, কমেছে ১৩০টির এবং ১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এগুলোর ওপর ভর করে সপ্তাহশেষে ২ হাজার ৩০৩ কোটি ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে ৬৬ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার বা ২.৭৯ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৬৯ কোটি ৫৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার।
আলোচ্য সময়ে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারের দখলে ছিল ৮০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে শেয়ারের লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯৪ হাজার ২৮৯ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেনের পরিমান ছিল ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৭০৩ টাকা। লেনদেনে গেলো সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারের অংশগ্রহন ছিল ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ। এসব শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪৯ কোটি ৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা। আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪৩.৩৬ পয়েন্ট বা ০.৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪০.০৫ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৭৩.১৬ পয়েন্ট বা ০.৭৫ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ৯৪.৩৬ পয়েন্ট বা ০.৬৭ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ৩.৬৪ পয়েন্ট বা ০.৩১ শতাংশ এবং সিএসআই ১৪ বা ১.২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ হাজার ৭৩৪.০৬, ১৪ হাজার ৭৩.৭৭, ১ হাজার ১৭১.৪৯ ও ১ হাজার ৪৯.১৪ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের হাত বদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯২টির, দর কমেছে ১০৫টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির। এগুলোর ওপর ভর করে সপ্তাহজুড়ে ১৪৪ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪৮ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০৮ কোটি ৮১ লাখ ১৫ হাজার ৬২৬ টাকার। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ১২২ টাকা বা ৩২.৪৪ শতাশ বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসে যায়। সবার হয়তো সমান ধারণা থাকে না বাজার সর্ম্পকে। তবে সকলকেই সাবধানে দেখেশুনে বিনিয়োগ করা উচিৎ। আস্তে আস্তে মার্কেট বুঝে শুনে বাই সেল করে নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরী করা উচিৎ। নিজের পোর্টফোলিওকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে লসের সম্ভাবনা কমে যায়। পোর্টফোলিওকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। এজন্য কোম্পানিগুলোর ফান্ডামেন্টাল এন্যালাইসিস করে কিছু নিজের পছন্দমত কোম্পানি বেছে নিতে হবে । এরপর ওইসব কোম্পানি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে সেগুলোর ওয়েবসাইটে সেসব তথ্য ডিসক্লোজ করা আছে তা ভালোভাবে যাছাই বাছাই করতে হবে। যেমনঃ তার রেশিও কত? ন্যাভ কত? ইপিএস কত? কোম্পানিটি কি রকম ডিভিডেন্ট দেয়? অর্থাৎ একটা ভালো কোম্পানির যেসব গুণাবলী থাকা দরকার তা এটার আছে কিনা- তা এনালাইসিস করে তারপর ঐ কোম্পানিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যেসব কোম্পানি খুব দ্রুত লাভ দেয় এতে লসের সম্ভাবনাও খুব বেশি। কাজেই এ ধরনের শেয়ার গুলো পোর্টফোলিওতে বেশিদিন ধরে রাখা যাবে না বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।