অব্যাহত দরপতনে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুঁজিবাজারে। এ যেন উল্টোপথের পথিক। যখন দেশের অর্থনৈতিক সূচকে দেখা মিলছে বড় প্রবৃদ্ধি, তখন পতনের ধারা থেকেই বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। চলতি বছরে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া পতনে, পর্যায়ক্রমে ডিএসই প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ১২’শ পয়েন্ট। আর সিএসই হারিয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৯’শ পয়েন্ট। ফলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকই নেমে এসেছে তিন বছরের আগের অবস্থায়। এতে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। যদিও আজ সূচক টেনে তুলতে এক ধরনের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কিন্তু তাতে স্বস্তি পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই তাদের এখন সবচেয়ে বেশি অনাস্থা। ফলে বর্তমান কমিশনের কোনো উদ্যোগেই কাজে আসছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, রেগুলেটরদের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং রেগুলেটরদের প্রতি আস্থাহীনতা এসে পরেছে। তিতাস গ্যাস, বীমা, গ্রামীণফোন এগুলোর যে ঘটনাগুলো ঘটছে এ সকল ঘটোনাগুলোই ক্যাপিটাল মার্কেটে প্রভাব ফেলছে। তাছাড়া ব্যাংক লুটেরাদের মধ্যে একজনকেও যদি শাস্তির ব্যবস্থা হতো, মানুষ দেখতো তাহলেও হয়তো কিছু টাকা ফেরত আসতো।
তারা আরও বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারিদের আস্থা ফেরাতে, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বাড়াতে হবে প্রণোদনা। সেইসাথে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও ব্যক্তি শ্রেণীতে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে করা নীতির বাস্তবায়ন দরকার। আর বাজার ভালো করতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে একটি প্রচেষ্টা নিতে হবে, সেই সাথে সব ইনস্টিটিউশন যদি উদ্যেগ নেয় তবে সবার মধ্যে বাজারের উপর আস্থাটা ফিরে আসতো। তবে বাজার স্বাভাবিক করতে সরকারি-বেসরকারি লাভজনক কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি উপরও জোর দিয়েছেন তারা।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই বিক্রয় চাপে টানা নামতে থাকে সূচক। তবে শেষ দিকে সৃষ্ট ক্রয় চাপে কিছুটা বৃদ্ধি পায় সূচক। আর মন্দা পরিস্থিতিতে আজ অন্যান্য খাতের যেখানে দৈন্যদশা। সেখানে উল্টো ভেল্কি দেখিয়েছে বীমা খাত। আজ এ খাতে থাকা ৪৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪০টিরই শেয়ার দর বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৭৭০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬৭৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৪০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৪৭৮১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১০৯৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৮৫ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ৪৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮১৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৫টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা।