তীরের সন্নিকটে এসেছে দীর্ঘ মন্দায় ডুবতে থাকা দেশের পুঁজিবাজার। গত কয়েক দিনে তলানিতে থাকা সূচকে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী উত্থান না হলেও নেতিবাচক প্রবণতা খুব একটা নেই। বরং একটি স্ট্যাবল পর্যায়ে রয়েছে এখনকার পুঁজিবাজার। বিভিন্ন সেক্টরে আগ্রহের দরুন লেনদেনেও কিছুটা গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সার্বিক চিত্র বলছে পুঁজিবাজার এভাবেই আস্তে আস্তে ভালো হবে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং তাদের নিবার্হীদের শেয়ার ব্যবসার অনুমতি, চীনের তত্ত্বাবধানে বাছাই করা শেয়ার নিয়ে ডিএসইতে সূচক চালুর উদ্যোগ, ফোর্স সেল বন্ধ, আইসিবির সাথে মার্কেট মেকারের ভূমিকায় বিডিবিএলকে অন্তর্ভক্ত করা এবং বিভিন্ন কারণে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগও এখন পুঁজিবাজারে ডুকছে। আইপিওর শেয়ার শেয়ার নিয়ে কারসাজির পক্রিয়াও বন্ধ করা হয়েছে। এমন সব ইতিবাচক খবরে সাইড লাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছেন। ফলে সার্বিক পুঁজিবাজারে একটি গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাপক সংস্কার দরকার। কেননা বিশ্বের যে কোনো পুঁজিবাজারে সমস্যা দেখা দিলে ৩০ শতাংশের বেশি মিউচুয়াল ফান্ড ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু আমাদের দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ভূমিকা খুবই নগণ্য। দুঃখের বিষয়, বাজারে তাদের তিন শতাংশেরও কম ভূমিকা রয়েছে। আবার শোনা যাচ্ছে, এসব ফান্ডের ম্যানেজাররা ইচ্ছামতো বাজারে অন্তর্ভুক্ত ইক্যুইটি পণ্যের বাইরেও বিনিয়োগ করে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক কমে গেছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সংস্কারের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন করা গেলে ভবিষ্যতে যেসব মিউচুয়াল ফান্ড আসবে, তারা সতর্ক হয়ে যাবে। চাইলেই ইচ্ছামত বিনিয়োগ করা যাবে না। যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাবে। কাজেই বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। এদিন শুরুতে ক্রয় চাপ কিছুটা বেশী থাকলেও পরবর্তীতে তা কিছুটা হ্রাস পায়। বুধবার লেনদেন শেষে সূচক কিছুটা বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪৭৩০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১০৮১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৬৪৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৮টির, কমেছে ১৮৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৫৬৪ কোটি ২২ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ২৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৭২২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১০৭৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৬৩৪ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৫৬০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৩৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৫টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ১১৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো শেয়ারে কারসাজির প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কয়েকজন মিলে শেয়ার কিনতে থাকে। এরপর তাদের কেনা হয়ে গেলে ছড়ানো হয় গুজব। কখনো কখনো কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়েও নানাভাবে বিনিয়োগকারীদেরকে প্রলুব্ধ করা হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এসব গুজবে কান দিয়ে শেয়ার কিনতে শুরু করেন, এরপর শুরু হয় কারসাজিকারীদের শেয়ার বিক্রির পালা। প্রতিনিয়তই চলছে এ প্রক্রিয়া। ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি। কিন্তু, এ ব্যাপারে বিএসইসির তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই, তেমন কারো বিচারও হয় না। দুই-একটি যাও হয়, তাও তা সংখ্যায় এতোটাই কম যে কারসাজিকারীরা তাতে থোরাই কেয়ার করে। কাজেই এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অর্থাৎ বাজার ভালো করতে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করতে হবে। সার্ভিলেন্স টিম আরও শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই প্রভৃতি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অভিজ্ঞ লোক বসাতে হবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে হবে। যদি ভালো কোম্পানি আনতে পারা যায়, তাহলে বাজারে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না বলেও ধারনা তাদের।