আস্থা না থাকা পুঁজিবাজার সংস্কারে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিন্তু কিছুতেই যেত পতনের তীর (কিনারা) খুঁজে পাচ্ছিলো না বাজার টানা পতনে নাভিশ্বাস ওঠা বাজারে নানা পলিসি সার্পোট দেওয়ার পরও ফিরেনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অবশেষ অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে সরাসরি অথবা সাবসিডিয়ারীতে ঋণ প্রদাণের মাধ্যমে পোর্টফোলিওর আকার বৃদ্ধি করে বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর নির্দেশ অনুযায়ী আজ থেকে পুঁজিবাজারে সংক্রিয় হয়েছেন তারা ফলশ্রুতিতে সূচক লেনদেন বেড়ে হঠাৎ করেই সেই কূল না থাকা বাজারই চাঙ্গা হয়েছে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এরইমধ্যে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের রিইনভেস্টমেন্ট বাতিল করা হয়েছে নরওয়ে ফান্ডের বড় একটা বিনিয়োগ আসারও ধারনা করা হচ্ছে আর তারল্য কাটাতে অর্থমন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন এগিয়ে আসাই আজ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে কাজেই ভবিষ্যতেও এমন পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে বলেও মনে করছেন তারা

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত সারা পৃথিবীতে শিল্পকারখানার প্রবৃদ্ধি হয় পুঁজিবাজার থেকে ইক্যুইটি নিয়ে এবং শুধু ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ব্যাংকগুলো জোগান দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে প্রবণতাটি নেই। আমাদের দেশে এখন প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। আর প্রকল্পগুলো যদি পুঁজিবাজার থেকে ইক্যুইটি নিয়ে করা যেত, তাহলে দুটি বিষয় ঘটত না। যেমন ইনস্টলমেন্টও দিতে হতো না এবং ইন্টারেস্টও দিতে হতো না। ফলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হতো এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ত। যেটি ভারতে হয়েছে। তাছাড়া দেশের বাজারে ভালো শেয়ারের খুবই অভাব। যেমন, দেশের প্রথম শ্রেণির ২০টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে মাত্র পাঁচটি বাজারে তালিকাভুক্ত আছে। কাজেই দেশের প্রধান শিল্পকারখানাগুলো যদি পুঁজিবাজারের টাকায় হতো, তাহলে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক শক্তিশালী হতো বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা

এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই ক্রয় চাপে টানা বাড়তে থাকে সূচক। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫০০০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭৮৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫৩টি কোম্পানি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৮২টির, কমেছে ৫৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৫১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৪৯২০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১১৫০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ১৭৬৬ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৪ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২১২ কোটি ৬২ লাখ ৪২ হাজার টাকা

অন্যদিকে, দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ১৫০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে হাজার ২২৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৫৩টি কোম্পানির মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৪টির, কমেছে ৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা

বাজার সংশ্লিষ্টব্যক্তিরা বলছেন, কোনো বিশেষ খবর কিংবা গুজবে অনেক সময় দূর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় এসব শেয়ারের দর বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের সব সময় খেয়াল রাখা দরকার। অন্যদিকে যারা দ্রুত মুনাফার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন, ভবিষ্যতে তারা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। এটা জানার পাশাপাশি বাজারে অনেক ভালো শেয়ার থাকা সত্ত্বেও অনেক বিনিয়োগকারী স্বল্প সময়ে দ্রুত মুনাফার জন্য এসব শেয়ারের পিছে ছুটছেন। এটি বাজারের জন্য সুখবর নয়। তবে বিনিয়োগকারীরা এটা সব সময় বোঝেন না। পুঁজি যার, নিরাপত্তার কথা তো তাকেই ভাবতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যদি জেনেবুঝে কোনো ভুল করেন, তবে এর দায় অন্য কেউই নেবে না বলেও মন্তব্য করেছেন ওই বিশ্লেষকরা